বেকারত্বের হাহাকার দূর হোক
দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় ‘এমপ্লয়মেন্ট ইমারজেন্সি বা কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। চলমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। একই সঙ্গে শিক্ষাখাতের সংকট ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে দেশের দরিদ্র পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে ২৯ শতাংশ স্নাতক বেকার। একটা পরিবারে এই বয়সী একটা ছেলে বা মেয়ের বেকার থাকা একটা বড় অশান্তি। গোটা পরিবারটাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। স্নাতক পাস মানে কর্মের জন্য খুবই উপযুক্ত বয়স। তাদের এক ঘণ্টার কর্ম দেশের জন্য মঙ্গল।
এখন দেশের অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব। অর্থনীতির জন্য এটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগ স্থবির। নতুন কর্মসংস্থান সৃজন না হওয়ায় দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাবই নয়, শ্রমবাজারের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরি না হওয়াও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত ডিগ্রি প্রদানকেন্দ্রিক। শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সীমিত। ফলে স্নাতকরা উচ্চশিক্ষিত হলেও শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। আমরা দেখছি, শিল্প ও সেবাখাত যেসব দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রত্যাশা করে, তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত থাকে। শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের এ অমিলই স্নাতক বেকারত্ব তৈরি করছে।
দেশে এক বছরের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চূড়ান্ত তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২০ হাজারে, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। মোট বেকারের মধ্যে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিক পাস। শুধু তা-ই নয়, ১৫-২৯ বছর বয়সী যুব বেকারদের মধ্যে প্রায় ২৯ শতাংশ স্নাতক। এছাড়া দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী কমেছে।
শিক্ষিত যুবসমাজ দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ দেশে তাদের একটি বড় অংশই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিকভাবেও গভীর সংকট তৈরি করছে। উচ্চশিক্ষার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছেন। কিন্তু বিনিয়োগ স্থবির থাকায় শ্রমবাজার সেভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। ফলে স্নাতক পাস করার পরও অনেকেই বছরের পর বছর বেকার থাকছেন। বেকারত্ব দূরীকরণে প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধি কেবল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাই সৃষ্টি করছে না, বরং তা জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্ব অনেক সময় সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে এবং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকেই অবসাদ, হতাশা এমনকি মাদকাসক্তির মতো নেতিবাচক পথে ঝুঁকছে। রাষ্ট্রের মূল্যবান মানবসম্পদ এভাবে অব্যবহৃত থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না, বরং আর্থসামাজিক ঝুঁকিগুলো আরও বেশি প্রকট করে তুলবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বেকারত্ব
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি
- দূরীকরণ