
ডিজিটাল বৈষম্য: সংযোগের যুগে নতুন সামাজিক স্তরবিন্যাস
ডিজিটাল প্রযুক্তি আধুনিক সমাজে এক নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায়, অর্থনীতিতে এবং সামাজিক সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলছে। একবিংশ শতকে বিশ্ব যখন দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন এই প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং এর ব্যবহার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক নতুন রূপ সৃষ্টি করছে। এই ধারণাটিই ডিজিটাল সামাজিক স্তরবিন্যাস (Digital Social Stratification Theory) তত্ত্বের মূল ভিত্তি।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সমাজে প্রথাগতভাবে বিদ্যমান শ্রেণি, পেশা বা শিক্ষাগত যোগ্যতার মতো বিষয়গুলো ছাড়াও এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তার কার্যকর ব্যবহারের সক্ষমতা সামাজিক অবস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই তত্ত্বের বিশ্লেষণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গত এক দশকে ডিজিটাল আর্থিক সেবা এবং মোবাইল ইন্টারনেটের দ্রুত বিস্তার দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা, সাশ্রয়ী স্মার্টফোন এবং ফিনটেক প্ল্যাটফর্মগুলোর (যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট) কারণে দেশের আর্থিক লেনদেন, তথ্যপ্রবাহ এবং সুযোগ-সুবিধার বণ্টন সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়েছে। এই ডিজিটাল অগ্রগতি দেশের অর্থনীতিকে একটি নতুন গতিশীলতা দিয়েছে। যেমন- গ্রাম থেকে শহরে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা এখন সহজেই তাদের পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারে, ছোট ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে এবং বিভিন্ন সেবা ঘরে বসেই উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে, এ সুবিধাগুলো সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। বরং, এটি একটি নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করেছে, যা শহুরে-গ্রামীণ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত এবং ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ডিজিটাল সামাজিক স্তরবিন্যাস তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে, যারা প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পেরেছে, তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে, আর যারা পিছিয়ে পড়েছে, তারা আরও বেশি প্রান্তিক হয়ে পড়ছে।
ডিজিটাল স্তরবিন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্মার্টফোন এবং মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার। বর্তমানে, স্মার্টফোন কেবল একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি আর্থিক সেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং তথ্যে প্রবেশাধিকারের একটি চাবি। যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ, দক্ষতা এবং নেটওয়ার্ক অর্জন করতে পেরেছে, তারা অনলাইনের মাধ্যমে ভালো চাকরির খবর, দ্রুত রেমিট্যান্স, ই-কমার্স, টেলিমেডিসিন এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইন্টারনেট সেবা
- ডিজিটাল প্রযুক্তি