একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েই বিয়ে করেন দুজন ব্যক্তি; কিন্তু একসঙ্গে থাকতে শুরু করার পর সবচেয়ে আপন এই মানুষের সঙ্গেও নানা কারণে তৈরি হয় মতবিরোধ। এক কথা, দুই কথায় বাধে ঝগড়া। বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে, স্বামী–স্ত্রীর ঝগড়া আসলে এক জায়গায় রাখা দুটি বাসনের ঠোকাঠুকির মতো। এগুলো জীবনেরই অংশ; কিন্তু এই ঠোকাঠুকি বাড়তে দিলেই বিপত্তি। তাই দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া কমিয়ে আনতে চাইলে প্রথমে মতবিরোধের কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বজুড়ে কী কারণে দাম্পত্যে ঝগড়া হয় বেশি, চলুন আগে সেটিই জেনে নেওয়া যাক।
১. বোঝাপড়ার অভাব
নাবিলা ও রাফি (ছদ্মনাম) দুজনেই চাকরিজীবী। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্ত নাবিলা আশা করেন, স্বামী তাঁর কাছে জানতে চাইবেন সারা দিন কেমন কাটল। কিন্তু তা না করে চুপচাপ নিজের মনে ফোন স্ক্রল করেন রাফি।
স্বামীর এমন আচরণে কষ্ট পান নাবিলা। অন্যদিকে রাফি ভাবেন, সারা দিন কাজের পর স্ত্রীর হয়তো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, ও একটু নিজের মতো থাকুক। দুজনের চাওয়া ভিন্ন। এভাবে নিজের প্রত্যাশার কথা না জানিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে থাকলে মনের ভেতর ক্ষোভ জমা হতে থাকে।
২. অর্থনৈতিক হিসাব
একজন বাইরে খেতে ভালোবাসেন, অন্যজন সঞ্চয়ে বিশ্বাসী। আর এতেই বাধে বিপত্তি। এ ছাড়া দুজনেই আয় করলে কে কোন খাতে ব্যয় করবেন, তা নিয়েও ঝগড়া করেন দম্পতিরা। দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য বিচ্ছেদ নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
অভিজ্ঞতার আলোকে এই আইনজীবী বলেন, ‘কেউ নিজের শখ পূরণ করতে গিয়ে অন্যের দিকটা ভাবছেন না, কেউ আবার নিজের ইচ্ছা–অনিচ্ছায় ক্রমাগত ছাড় দিয়েই যাচ্ছেন। সংসারে বারবার একপক্ষীয় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে যিনি ছাড় দিচ্ছেন, তাঁর মনে অসন্তুষ্টি তৈরি হয়, যা একসময় বড় ঝগড়ায় রূপ নেয়।’
৩. সময় না দেওয়া
দাম্পত্যে উপেক্ষার কোনো জায়গা নেই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সঙ্গীর জন্য সময় বের করা একটি নৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্ব। জার্নাল অব ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি নিজেদের মধ্যে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের কম একান্তে সময় কাটান, তাঁদের সম্পর্কে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়, বাড়ে দ্বন্দ্বের মাত্রা।
৪. ঈর্ষা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস
স্বামী–স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। একজনের সাফল্যে অন্যজন আনন্দিত ও গর্বিত হবেন—এটিই স্বাভাবিক। উল্টোটা ঘটলেই মুশকিল। একে অপরকে প্রতিযোগী ভাবলে বৈবাহিক জীবনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলেন, ‘বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে সঙ্গীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সন্দেহের চোখে দেখেন অনেকে। সন্দেহ বাড়তে বাড়তে তৈরি হয় অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। দীর্ঘমেয়াদি ঈর্ষা দাম্পত্যে ঘনিষ্ঠতা কমায়, বাড়ায় মানসিক চাপ। তাই এসব দিকে দুজনেরই নজর রাখা উচিত।’