বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে ভিসা অনিশ্চয়তা

প্রথম আলো কাজী আলিম-উজ-জামান প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৫৫

মেধাবী তরুণ-তরুণীদের কাছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি লক্ষ্য নয়; বরং জীবন পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা। যেখানে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অসংখ্য গবেষণার সুযোগ মেলে, সেটিই হয়ে ওঠে অনেকের জীবনের মোড় ঘোরানোর আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই স্বপ্নপথে এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিসা–সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা।


নাম নাই–বা বললাম। গত বছর অনার্স শেষ করা বাংলাদেশের এক তরুণী এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি-সংক্রান্ত অফার লেটার পেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা নেওয়ার জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। প্রথম দিকে কোনো সময়সূচি না পেয়ে হাল ছাড়তে হয়। পরে মে মাসে আবার চেষ্টা করলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট মেলে ঠিকই, তবে সেটা ডিসেম্বর মাসে, অর্থাৎ সাত মাস পর। স্বাভাবিকের তুলনায় এই দীর্ঘ অপেক্ষা তাঁর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে ভর্তি স্থগিত করে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হয়।


আরেকজন শিক্ষার্থীর গল্প আরও বেদনাদায়ক। দেড় বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে মাস্টার্স করছিলেন, পড়াশোনাও ছিল শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ এক সকালে একটি ই–মেইল পান। তাতে জানানো হয়, তাঁর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে দেশ ছাড়তে হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি দখল ও গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি যে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন, সেটিই তাঁর ভিসা বাতিলের কারণ। বর্তমানে ছেলেটি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। চেষ্টা করছেন অন্য কোথাও পিএইচডি করার সুযোগ খুঁজে নিতে। কিন্তু ভিসা বাতিলের রেকর্ড থাকায় তাঁর জন্য নতুন কোনো সুযোগ পাওয়া এখন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


২.


গত ২৭ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বব্যাপী দেশটির সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে নির্দেশ দেন, যাঁদের ভিসার সাক্ষাৎকারের তারিখ ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে, তাঁদের আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে ঠিকই, তবে নতুন করে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন গ্রহণ না করার নির্দেশ কার্যকর থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।


বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন ভিসা আবেদনপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখার বিষয়ে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে যে কূটনৈতিক তারবার্তা পাঠিয়েছেন মার্কো রুবিও, তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেদনকারীদের কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক বিষয় আরও গভীরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে নতুন করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন গ্রহণ স্থগিত রাখতে বলা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।’


এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দেশে কারা আসছে, তা যাচাই-বাছাই (ভেটিং) করার প্রক্রিয়াকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। কেউ শিক্ষার্থী পরিচয়ে আসুক বা অন্য কোনো কারণে আসুক, তাঁদের পরিচয় ও কর্মকাণ্ড যাচাই করে দেখার সব উপায়ই আমরা ব্যবহার করব।’


ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছর থেকেই কমতে শুরু করেছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী যাওয়া আরও কমে যাবে।


যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অন্য অভিবাসীদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ছয় হাজারের বেশি স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এসব ভিসার মধ্যে প্রায় চার হাজার বাতিল করা হয়েছে আইন ভঙ্গের কারণে, যার মধ্যে রয়েছে আক্রমণ, মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, চুরি ও সন্ত্রাসবাদে সমর্থন। যাঁদের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাঁরা কতটা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন, সেটা একটা প্রশ্ন বটে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও