আমরা কি এমন জাকসু নির্বাচন চেয়েছিলাম?

বিডি নিউজ ২৪ সৌমিত জয়দ্বীপ প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১৭

জানি না, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথ আর কত কণ্টকাকীর্ণ হবে! গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা নির্বাচনি গণতন্ত্রের একটা যথাযথ মডেল এই বাংলাদেশে দেখতে চেয়েছিলাম, যেটা বিগত সময়ের চেয়ে একদমই আলাদা হবে। মোদ্দাকথা, আওয়ামী আমলে যে মডেল দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ভোট-গণতন্ত্রের সেটার পুনরাবৃত্তি আমরা চাইনি। সেটার একটা আদর্শ মঞ্চ হিসেবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য জায়গা থেকেই এই ভোট-গণতন্ত্র শুরু হয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই নির্বাচনগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আশা জাগানিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ, দীর্ঘকাল এগুলো বন্ধ ছিল সরকার ও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে এবং নির্বাচন দিলে ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়বে’ অজুহাতে। ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। ৩৩ বছর পর জাকসুও নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। কোনো নির্বাচনেই তথাকথিত ‘লাশ পড়ার’ জুজু সত্য হয়নি। কিন্তু, নির্বাচনি অব্যবস্থাপনা ও কারচুপির অভিযোগ থেকে ডাকসুর ৬ বছরের ব্যবধানে হওয়া দুটি নির্বাচনকে যেমন রক্ষা করা যায়নি, জাকসুকেও গেল না। উপরন্তু, জাকসুর পিঠে কলঙ্কের দাগ হিসেবে যুক্ত হলো নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে একজন তরুণ শিক্ষকের মৃত্যু।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন এখনও উত্থাপিত হচ্ছে। তবে, ডাকসুর ‘রেকর্ড’কে কয়েকগুণ ছাপিয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। জাকসুতে যা হয়েছে, সেই তুলনা করলে, ডাকসু নির্বাচনকে অপেক্ষাকৃত অনেক ঝঞ্ঝামুক্ত বললে অত্যুক্তি হবে না।


২.


জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের দিন তো বটেই, ভোটের আগের এবং পরের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথবা, বলা যেতে পারে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক, সেটা আক্ষরিক অর্থেই আন্তরিকতার সঙ্গে তারা চায়নি। ডাকসুতে কোনো প্যানেলই অন্তত নির্বাচন বয়কট করেনি। কিন্তু, জাকসুতে আটটি প্যানেলের মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত একটি ও ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত দুটি প্যানেলসহ প্রগতিশীলদের চারটি প্যানেল (মোট পাঁচটি প্যানেল) এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন বা বয়কট করেছে। এই প্যানেলগুলো পুনঃনির্বাচনেরও দাবি জানিয়েছে।


তবে, নির্বাচন বয়কটের প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্রবেশে একজন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় যে, তিনি আসলে সাধারণ ছাত্র নন, আদতে শিবিরকর্মী। সংবাদমাধ্যমও জেনে বা না-জেনে তাকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আদতে, পুরো নির্বাচন ঘিরে জাহাঙ্গীরনগরে কর্মরত কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিক-নেতাদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু, তারাও নানান সংবাদ অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করেছেন, কখনও সংবাদমাধ্যমে, কখনও নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে, কখনওবা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পাস-সংশ্লিষ্ট পেইজগুলো থেকে। এর ফলে, গুজব যেমন ছড়িয়েছে, উত্তেজনাও বেড়েছে।


অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বয়কট করার আগেই, অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা বিএনপিপন্থী তিনজন শিক্ষক নির্বাচন বর্জন করেছেন। শেষপর্যন্ত এ নিয়ে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে দুই নির্বাচন কমিশনার ও তিন কর্মকর্তা সরে দাঁড়িয়েছেন।


নানা নাটকীয়তার পর ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটের ফল ঘোষিত হয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর। ভাবা যায়! যে তিনটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেনি, তাদের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। তবে, ডাকসুর মতো জাকসুতেও ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় বিজয় হয়েছে ছাত্রশিবিরের। জাকসুতে অবশ্য সহ-সভাপতি পদটি তারা জিততে পারেননি, জিতেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। তবে, বিজয়ী ও বর্জনকারী যুযুধান প্রায় সবপক্ষই নির্বাচন ঘিরে নিজেদের অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।


যার অর্থ হলো, আমরা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে একটা যথাযথ নির্বাচনি গণতন্ত্রের মডেল তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এত কেচ্ছাচার শুধু একটি প্রশ্নই সামনে আনছে: আমরা কি এমন জাকসু নির্বাচন চেয়েছিলাম?


৩.


বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে ভোটের ফলাফল না-মেনে নেওয়ার একটি প্রথা বরাবরই ছিল। এমনকি বিজিত পক্ষ বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানাতেও কার্পণ্যবোধ করে। সেই সংস্কৃতির বদল গণ-অভ্যুত্থানের পর এবারও হলো না। আবার, ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে’র যে কৌশলও সেটিরও বিলোপ হলো না। আগে হওয়া ডাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে জাকসু ঘিরে তাই প্রার্থী ও ভোটাররা স্বভাবতই অনেক বেশি সতর্ক ছিলেন বলা যায়। কিন্তু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জাকসু নির্বাচন কমিশন সেসব জানা সত্ত্বেও নিজেরা সতর্ক হননি।


হয়তো তারা সেটাই চেয়েছিলেন। নইলে ডাকসু নির্বাচনের মাত্র ২ দিন বিরতিতে তারা জাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেন কোন যুক্তিতে? সেটা কি এজন্য যে, যখন সারাদেশ ও মিডিয়া ডাকসু নিয়ে স্বাভাবিক ‘ওভার হাইপে’ থাকবে, তখন এর ছায়াতলে থেকে তারা সমস্ত নকশা বাস্তবায়ন করে ফেলবেন! অথচ, ৩৩ বছর পরে একটি নির্বাচন আয়োজন যারা করেন, স্বভাবতই তারা চাইবেন, তাদের কৃতিত্ব ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচারিত হোক।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও