
‘২৮ বছরেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি, কীভাবে বেঁচে আছি জানতে চায়নি’
সাদা বেলাভূমিতে সাগরের নীল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। শান্ত সাগরে চক্কর দিচ্ছে কয়েকটা গাঙচিল। এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য থেকে খানিক দূরেই হাবিবুর রহমানের বাড়ি। পলিথিনের ছাউনি দেওয়া বেড়ার জীর্ণ ঘর। একসময় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) ছিলেন হাবিবুর। এখন অবসর নিয়েছেন। বাড়ির আঙিনায় পাওয়া গেল তাঁকে। কথা বলতে শুরু করেই নিজের ঘরের দিকে দেখালেন। বললেন, ‘১২ বছর আগে ঘরটা ভেঙে গেছে। এরপর পলিথিন আর বাঁশের বেড়া দিয়ে কোনোমতে সংস্কার করেছি। গত ২৮ বছরে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। কীভাবে বেঁচে আছি, জানতে চায়নি।’
কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ নম্বর শেডের একটি ঘরের সামনে বসে কথাগুলো বলছিলেন হাবিবুর রহমান। ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন সেন্ট মার্টিনের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প ছিল এটি। সে সময় ঝড়ে ঘর হারানো হাবিবুর রহমানসহ ৫০টি পরিবারের স্থান হয়েছিল এই প্রকল্পে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সাবেক দুই চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও ফিরোজ আহমদ খান বলেন, নির্মাণের পর দ্বীপের মধ্যভাগে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের পাড়ায় গড়ে তোলা দেশের প্রথম এই আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার পর আর কেউ খোঁজখবর রাখেনি। সংস্কার হয়নি ঘরগুলোর। এখানকার বাসিন্দারা একরকম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বেহাল আশ্রয়ণ প্রকল্প
দ্বীপের কয়েকজনের দান করা ৮০ শতক (দুই কানি) জমির ওপর টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত হয়েছিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাঁচটি লম্বা শেড। সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর। স্থাপন করা হয়েছিল তিনটি নলকূপ ও তিনটি স্যানিটারি ল্যাট্রিন। নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয় কাঁটাতারের সীমানা বেড়াও।
ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছরে ঘরগুলোর কোনো সংস্কার হয়নি। টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া নষ্ট হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের অবস্থাও নাজুক।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- আশ্রয়ণ প্রকল্প