
কিন্তু নির্বাচন চায় না কারা?
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণা করেছে। তবে নির্বাচনের দিন-তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি এখনও। অবশ্য রাজনৈতিক অঙ্গন ও আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলে একটি সম্ভাব্য তারিখ ঘুরছে বলে শোনা যায়। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং সেই তথ্য সরকার নিজেই প্রচার করছে ফলাও করে।
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। মানুষ কেন যেন এখনও ঠিক আস্থায় নিতে পারছে না যে দেশে একটা সত্যিকারের নির্বাচন হবে। যার কারণে রাজনীতির মাঠে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাপ জোরদার থাকলেও গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে টং দোকানের নির্বাচনি চা এখনও জমতে শুরু করেনি।
এর মানে এই নয় যে জনগণ নির্বাচন চায় না। বরং উল্টো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সতের বছর ধরে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য একটি সত্যিকারের নির্বাচন অন্যতম প্রধান চাওয়ায় পরিণত হয়েছে। তাহলে কেন এই আশা-আকাঙ্ক্ষার অবণিবনা দৃশ্যমাণ হচ্ছে?
আমাদের মনে আছে, খুবই মনে আছে, গতবছর অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপর নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করতেন, তখন এই অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টাই বেশ ক্ষেপে যেতেন। বলতেন, তারা শুধু নির্বাচনের জন্য সরকারে আসেননি। আরও অনেক দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, দায়িত্ব শেষ করেই চলে যাবেন। সংস্কার করবেন, বিচার করবেন এবং এগুলো যথাযথভাবে করতে যতটুকু সময় লাগে, ততদিনই দায়িত্বে থাকবেন। এর একদিনও বেশি নয়।
তখন জনগণ অনেকটা আশাহত হয়েছিল। মনে করেছিল, নির্বাচন হয়তো হবে না। কারণ নির্বাচনের বিষয়টি তখন অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছিল, অন্তত উপদেষ্টাদের কারো কারো কথাবার্তায়।
কিন্তু পরিস্থিতি এখন অন্য রকম। সরকারের আগ্রহ নির্বাচনের প্রতি রয়েছে, তবে জনগণ আর বিশ্বাস করতে চায় না যে নির্বাচন সত্যিই হবে।
জনগণ কেন এমন ভাবছে? এটি শুধু শঙ্কা নয়; এটি দীর্ঘ দিনের অসন্তুষ্টি ও আস্থাহীনতার ফল, যা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর মানুষের বিশ্বাসকে দুর্বল করেছে।
শুধু জনগণই নয়, সরকারও মনে করছে নির্বাচন করাটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তা না হলে কেন গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেলেন, “নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির (২০২৬ সালের) প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারবে না।”
এতে মনে হচ্ছে সরকারও জানে যে কেউ না কেউ এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা কারা?