নেপালের রাজনৈতিক সংকট থেকে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা

প্রথম আলো ড. গোলাম রসুল প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২

নেপালে পরিস্থিতি এখন চরম উত্তপ্ত ও অগ্নিগর্ভ। জেনারেশন জেড বা ‘জেন–জি’ নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সরকারের মন্ত্রীদের যাকে যেখানে পেয়েছে বেধড়ক পিটিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।


বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছেন জাতীয় সংসদ ভবনের অংশ, সিংহদরবার সচিবালয়, মন্ত্রিপরিষদের আবাসন এলাকা এবং ইউনিফায়েড মার্কসবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই প্রতীকী আগুন গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় অকার্যকারিতার বিরুদ্ধে এক প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।


নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘জেন-জি’ আন্দোলন পুরো দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য এক সতর্কবার্তা। ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার যখন হঠাৎ করে ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়, তখন তরুণেরা সেটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখেন।


এর আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ‘নেপো বেবি’ ট্রেন্ড রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের অযাচিত সুযোগ-সুবিধা ও সম্পদের চিত্র প্রকাশ করে, যা দুর্নীতি ও নেপোটিজমের প্রতি তরুণদের ক্ষোভকে আরও ঘনীভূত করে। যদিও আন্দোলনের তাৎক্ষণিক সূত্রপাত এই ডিজিটাল ব্যান থেকে, কিন্তু এর শিকড় অনেক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি এবং অকার্যকর শাসনব্যবস্থায়।


২০০৮ সালে নেপাল তার শতাব্দীপ্রাচীন রাজতন্ত্র বিলোপ করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে। সেই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মুহূর্তে জনগণের মনে জেগে উঠেছিল সমতা, সমৃদ্ধি এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন—নতুন কর্মসংস্থান, মানসম্পন্ন সরকারি সেবা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রার প্রত্যাশা। মানুষ বিশ্বাস করেছিল, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করবে, দারিদ্র্য দূর করবে এবং একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলবে।


কিন্তু গত দুই দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতির বিস্তার এবং স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি এই প্রত্যাশাগুলোকে বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা ও বাস্তবতার মধ্যকার ব্যবধান আজ এতটাই প্রকট যে তা তরুণদের মধ্যে গভীর হতাশা ও আস্থাহীনতার জন্ম দিয়েছে।


২০০৭ সালে নেপাল একটি অন্তর্বর্তী সংবিধান গ্রহণ করে, যা ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পথপ্রদর্শক ছিল। ২০০৮ সালে কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় স্তরে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের সংবিধান নারীদের, দলিত ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, যা বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত। সংবিধান সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অসমতা দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি বহন করেছিল।


২০০৮ সালের প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর থেকে মাত্র ১৬ বছরে নেপালে ১৩টি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মূল তিনটি রাজনৈতিক দল হলো মাওবাদী কেন্দ্র, সিপিএন-ইউএমএল এবং নেপালি কংগ্রেস। এ দলগুলো ক্ষমতার লড়াই ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অতিরিক্ত জড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের চাহিদা বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা কৌশলগত জোট গঠন এবং ক্ষমতা ধরে রাখার দিকে বেশি মনোযোগী হয়েছে।


এর ফলে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত হয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুবসমাজের মধ্যে হতাশা জমে গেছে আর এই হতাশা আজকের আন্দোলনের মূল ইন্ধন হিসেবে কাজ করছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও