প্রকৃত বন্ধু আসলে কে?

ঢাকা পোষ্ট জেসান আরা প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮

বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘সঙ্গী মন্দ, সর্বনাশ অনন্ত’। অর্থাৎ, খারাপ বন্ধুর সঙ্গে চললে জীবনে সর্বনাশ নেমে আসে। মানুষের চরিত্র, চিন্তাধারা ও জীবনের গতিপথ অনেকাংশেই তার সঙ্গী দ্বারা নির্ধারিত হয়। যেমন ভালো সঙ্গ আমাদের উন্নতির পথে নিয়ে যায়, তেমনি মন্দ সঙ্গ আমাদের অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয়।


মনোবিজ্ঞানে বলা হয়, বন্ধু হলো সামাজিক সমর্থনের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব যদি হয় সুযোগসন্ধানী বা স্বার্থপর, তবে তা মানসিক আঘাত ও একাকীত্ব সৃষ্টি করে। বাংলার লোকজ সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় শিক্ষায়ও খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।


কারণ প্রকৃত বন্ধু দুঃসময়ে সমর্থন দেয়, আর মন্দ বন্ধু শুধু সুবিধার সময় পাশে আসে। তাই খারাপ বন্ধু চেনা এবং সঠিক বন্ধুত্ব নির্বাচন করা জীবনের মান উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সুখের সময়ে চারপাশে অনেক মানুষকে কাছে পাওয়া যায়, কিন্তু দুঃসময়ে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পায়। 


বিপদের সময়ে বন্ধুত্বের গুরুত্ব:


মানুষ যখন কষ্টে থাকে, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ বা পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত, তখন বন্ধুর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। সত্যিকারের বন্ধুরা তখন শুধু সান্ত্বনাই দেয় না, বাস্তবে সাহায্যও করে, যেমন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে গিয়ে পাশে দাঁড়ানো, মানসিক সমস্যায় পাশে বসে শোনা, আর্থিক কষ্টে সামান্য সহায়তা দেওয়া, পরিবারে সংকট এলে মনোবল জোগানো।


এসব ছোট ছোট সহায়তাই কঠিন সময়কে সহনীয় করে তোলে। আর যে বন্ধুরা শুধু আনন্দের সময় পাশে থাকে কিন্তু কষ্টের সময় অদৃশ্য হয়ে যায়, তাদের প্রকৃত বন্ধুর তালিকায় রাখা যায় না। আমাদের সমাজে নানা সংকটের সময় বন্ধুত্বের আসল পরীক্ষা হয়।


অর্থনৈতিক সংকট: ঢাকা শহরে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চাকরি হারানোর পর ভাড়া ও খাবারের টাকাও জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। সে সময় যাদের সাথে আড্ডা দিত তারা দূরে সরে যায়, কিন্তু শৈশবের এক বন্ধু নিজের সামান্য আয় থেকেও তাকে কয়েক মাস সহায়তা করে। এখানেই প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশ পায়।


প্রাকৃতিক দুর্যোগ: গ্রামীণ এলাকায় বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রতিবেশী কিংবা বন্ধুরাই প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়ায়। কেউ খাবার দেয়, কেউ আশ্রয় দেয়। বিপদ সামলাতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে এই বন্ধুরাই।


স্বাস্থ্য সংকট: একজন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হলে অনেক আত্মীয়ও আসতে চায় না, কিন্তু প্রকৃত বন্ধু রাত জেগে সেবা করে। এই আচরণই বন্ধুত্বের আসল প্রমাণ।


সুযোগসন্ধানী বন্ধুদের বৈশিষ্ট্য:


আমাদের জীবনে এমন অনেক মানুষ থাকে যারা কেবল নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাছে আসে। এরা মূলত সুযোগসন্ধানী। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এদের বলা যায় instrumental friends, অর্থাৎ যাদের সম্পর্ক কেবল নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য। যেমন—


১. চাকরিতে পদোন্নতি হলে অভিনন্দন জানায়, কিন্তু চাকরি হারালে পাশে দাঁড়ায় না। সুখবর শুনে হাততালি দেয়, কিন্তু কষ্টের সময় সরে যায়।


২. টাকার প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করে, কিন্তু বিপদের সময় সাহায্য করতে চায় না। সম্পর্ককে শুধু স্বার্থের জন্য ব্যবহার করে।


৩. নিজের সমস্যার কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলে, কিন্তু অন্যের কষ্ট শোনে না। একতরফা সম্পর্ক তৈরি করে যেখানে সহানুভূতির অভাব থাকে।


৪. অসুস্থ হলে খোঁজ নেয় না, কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান বা আনন্দক্ষণে সবসময় উপস্থিত থাকে। দুঃসময়ের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না।


৫. গোপন কথা শোনে কিন্তু পরে অন্যের সামনে ফাঁস করে দেয়। বিশ্বাস ভঙ্গ করে, যা প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিপন্থি।


৬. সুবিধা থাকলে কাছে আসে, কিন্তু দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। কেবল নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে বন্ধুত্বকে ব্যবহার করে।


৭. সরাসরি সাহায্য না করে আড়ালে সমালোচনা করে। দুঃসময়ে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে কষ্ট বাড়ায়। আবার পরিস্থিতি ভালো হলে হাসিমুখে ফিরে আসে।


৮. বিপদের সময় দেখা হলেও সালাম দেয় না। আমাদের সংস্কৃতিতে ভাই, বন্ধু বা পরিচিত কেউ যখন দেখা করে তখন শুভেচ্ছা বিনিময় বা শ্রদ্ধা জানানো সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করা হয়। সংকটের সময় এটি এড়িয়ে চলা মূলত পাশে না থাকার লক্ষণ এবং সম্পর্কের প্রতি অসততা নির্দেশ করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও