
বদরুদ্দীন উমর যেভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন
কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমার যোগাযোগ একদম ছেলেবেলা থেকেই। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আমাদের পরিবার ছিল বৃহত্তর একটি পরিবার। সেখানে রাজনীতি করার মতো লোক অনেকেই ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা ছিলেন—একেবারে জেলা পর্যায়ে, প্রাদেশিক পর্যায়ে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। সেখানে কংগ্রেস ছিল, মুসলিম লীগ ছিল, কমিউনিস্ট পার্টির লোক ছিল। শুধু হিন্দু মহাসভা ছিল না।
বর্ধমান জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমার ফুফাতো ভাই সৈয়দ শাহেদুল্লাহ। তাঁর ভাই ও আমার আরেক ফুফাতো ভাই মনসুর হবিবুল্লাহ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বর্ধমানে কমিউনিস্ট পার্টির খুব ভালো সংগঠন ছিল। ২নং পার্কাস রোডের যে বাড়িতে আমরা থাকতাম, তা আমার দাদির বাড়ি ছিল। সেখানেই জন্মেছিলাম এবং বড় হয়েছি। আমরা একসঙ্গে থাকতাম। পরে আশপাশে অন্য বাড়িতে থেকেছি। কিন্তু ২নং পার্কাস রোডের ওই বাড়িটিই ছিল কমিউনিস্ট অ্যাকটিভিটির হাব (মূল কেন্দ্র)।
আমাদের পরিবার ছিল রাজনৈতিক পরিবার। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনো ছিলাম না। আমি কখনো ছাত্ররাজনীতিও করিনি। আমার সমবয়সী বা দু-এক বছরের বড়-ছোটরা ছাত্র ফেডারেশন করত। আমি ছাত্র ফেডারেশন করতাম না। মিটিং-মিছিলে যেতাম, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংগঠনের সঙ্গে ছিলাম না।
আমার আব্বা মুসলিম লীগ করতেন, কিন্তু আমি কোনো দিন ছাত্রলীগের ধারেকাছে যাইনি। তিনি আমাকে কোনো দিন ছাত্রলীগ করার কথা বলেননি। ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলাম। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও তাদের সঙ্গেই ঘোরাফেরা করতাম। কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে যে ক্লাসগুলো হতো, সেগুলোতে যেতাম। সেখানে ক্লাস নিতেন শাহেদুল্লাহ সাহেব, বিনয় চৌধুরী, হরেকৃষ্ণ কোঙার, যাঁরা পরে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছিলেন। আব্বা কখনো এসবে আমাকে নিষেধ করেননি। আমাদের পরিবারে দারুণ একটা পরিবেশ ছিল।