ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা কেন?

বাংলা ট্রিবিউন আকরাম হোসাইন প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৮

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি কেবল ক্যাম্পাসের রাজনীতি নয়; এটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের স্বৈরশাসনের পতন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান—প্রতিটি সংকট- সংগ্রামেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। বুলেটের মুখে বুক পেতে দিয়ে দেশের ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণ করেছে। এসব আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা ছিল শুধুই নেতৃত্ব দেওয়াই নয়; বরং তারা জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ খুলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট  হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে ছাত্রদের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়েছে।  


কিন্তু এই ছাত্রসমাজই দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বহু বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ২০১৯ সালে, সেটিও নানা অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ। তার আগে টানা ২৮ বছর নির্বাচন হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯০ সালে, জাহাঙ্গীরনগরে ১৯৯২ সালে। এরপর থেকে আর কোনও নিয়মিত নির্বাচন হয়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয় নিয়মিত, সিনেট ও সিন্ডিকেটের নির্বাচন হয়, এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও নিয়মিত তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। কেবল ছাত্রসমাজকেই বছরের পর বছর বঞ্চিত রাখা হয়েছে।


বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৩.৬ লাখ। পাশাপাশি, দেশের ১১০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে প্রায় ৩.৪ লাখ শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজার ২৫৭টি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এই বিশাল শিক্ষার্থীসমাজকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দিতে হলে কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকা জরুরি।


২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ছিল এক ধরনের প্রতীকী আয়োজন, কিন্তু তাতেও ছিল নানা অনিয়ম। প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার থাকলেও উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৪ শতাংশের মতো। অভিযোগ উঠেছিল—আবাসিক হলে ভোট দিতে না দেওয়া, ব্যালট বাক্সে আগাম সিল মারা, নির্বাচনি পরিবেশ না রাখা ইত্যাদি। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের আস্থাহীনতা আরও বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদকে প্রহসনে পরিণত করা হলে তার মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়।


২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রসমাজ নতুন করে দাবি তুলেছে, সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে, এবং এর জন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও হাইকোর্ট হঠাৎ স্থগিত করে দেয়, যদিও আপিল বিভাগ তা বাতিল করে পুনর্বহাল করেছে। এই টালবাহানা স্পষ্ট করে যে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে বারবার রাজনৈতিক কূটচালের হাতে বলি দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো—ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কখনও পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাবে না।


ছাত্র সংসদ কেবল দাবি-দাওয়া আদায়ের জায়গা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গুণাবলি বিকাশের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। আবাসিক হলে সিট বণ্টন, ক্যানটিন ও ডাইনিং পরিচালনা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আয়োজন, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা, জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে মতামত প্রদান—সবকিছুতেই ছাত্র সংসদের ভূমিকা থাকে। এর মধ্য দিয়েই ছাত্ররা শিখে নেয় সংগঠন চালানো, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা, জবাবদিহি করা এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা।
ভবিষ্যতে যারা জাতীয় নেতৃত্বে আসবে, তাদের জন্য এটি অনন্য এক প্রশিক্ষণশালা।


আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানও এ দাবি সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলো নিয়মিত নির্বাচিত হয় এবং তারা শিক্ষা বাজেট, টিউশন ফি, পরিবেশ নীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো সমসাময়িক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্র আন্দোলন একসময় সামরিক শাসন ভেঙেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ছাত্র সংসদ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়েছে, চিলির ছাত্র আন্দোলন শিক্ষানীতি বদলে দিয়েছে। অর্থাৎ ছাত্র সংসদ শুধু ক্যাম্পাস নয়, পুরো সমাজে পরিবর্তনের চালিকা শক্তি হতে পারে এটা শুধু আমাদের দেশের বাস্তবতা নয়, বরং বিশ্বজুড়েই এর অসংখ্য নজির রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও