
অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, আমরা স্বামী-স্ত্রী
শিবলী মোহাম্মদের ফোন বন্ধ। শামীম আরা নীপারও! একুশে পদকপ্রাপ্ত দুই নৃত্যশিল্পী দেশে নেই, নিশ্চিত। ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখেছিলাম, দুজন একসঙ্গে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে কি চলে গেছেন?
বাংলাদেশ সময় রাত দশটা। হোয়াটস অ্যাপে কল করেও পাওয়া যায় না শিবলী মোহাম্মদকে। আধঘণ্টা পেরোবার আগেই তিনি কল ব্যাক করেন। ঘুমভাঙা স্বরে স্নেহভরে জানতে চান, ‘কী রে, ক্যামন আছিস?’
কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদের জন্মদিন আজ ৪ সেপ্টেম্বর। পরিচয়ের পর থেকেই দেখে আসছি, তিনি ভীষণ নরম মানুষ। স্নেহ-ভালোবাসায় টইটম্বুর। তার শাসনেও মাখা থাকে বিপুল আদর। শুধু একটি ব্যাপারে কঠোর — বয়স। বয়সের সংখ্যাটি তিনি কখনও প্রকাশ বা উচ্চারণ করতে চান না। কারণ এ কেবলই এক সংখ্যা তার কাছে। তবু লোকে জানবে, ক্যারিয়ারের মতো বয়সেও একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ। তিনি কি কেবলই বাংলাদেশের?
না, তিনি এখন আর কেবল বাংলাদেশের নন। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে তার ছাত্র, বন্ধু, স্বজন, অনুরাগীর দল। গত আগস্ট জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে নাচের কর্মশালা করিয়েছেন তিনি, সেখানেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। নাচের কর্মশালায় অংশ নিতে এসেছিলেন এত এত শিক্ষার্থী, কখনও কখনও, কোথাও কোথাও নাচের অনুষ্ঠান দেখতে এত দর্শকও আসে না। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে নাচের ওয়ার্কশপ করিয়েছেন। ফোনে সে অভিজ্ঞতার ভাগ দিতে গিয়ে বললেন, ‘আমার আর নীপার কথা শুনে এত পার্টিসিপেন্ট এসেছে বলার নয়। একপর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। ওয়াশিংটনে যেখানে ওয়ার্কশপ করানো হবে, সেখানে এত জায়গা কোথায়? তবু ৮০ জনের বেশি পার্টিসিপেন্ট নিতে হয়েছে। চলতি মাসের ১৩ তারিখে আবার নিউজার্সিতে ওয়ার্কশপ করাতে যাবো।’
নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর পর কোনো পুরুষ নৃত্যশিল্পীর এত ক্রেজ বাংলাদেশে দেখা যায়নি। এমনকি নৃত্যজুটি হিসেবে শিবলী-নীপা যেন সমগ্র বাঙালি সমাজের বিস্ময়! গল্পেচ্ছলে জানতে চাই, ‘আপনাকে আর নীপা আপাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা ভাবেন। আপনারা কি তা জানেন?’ শুনে খুব স্বাভাবিক স্বরে বললেন, ‘আমরা দুজনই হাসি। খুব হাসি। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, আমরা স্বামী-স্ত্রী। অথচ আমাদের সম্পর্কটা যে কেমন, সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। আমার পরিবার নীপার পরিবার, নীপার পরিবার আমার পরিবার। আমরা দুজন দুজনার দুটি পার্ট, আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের সম্পর্কটাও ভীষণ মধুর।’