হুমকিতে মাছ, মানুষ ও জীববৈচিত্র্য

www.ajkerpatrika.com ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৭

বাংলাদেশে মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রাচীন পদ্ধতি আর ব্যবহার করছেন না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের খবর। জেলেরা এক ধরনের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এই ট্যাবলেট অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা, এটি পানিতে ফেললে জলে থাকা সব মাছ তো মারা যায়ই, সঙ্গে মাটির নিচের মাছগুলোও মারা যায়। মৃত মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। পরে তা জেলেরা ধরে বিক্রি করেন। এইভাবে জেলেরা মাছ শিকার করছেন প্রায়ই। কেননা, এতে সময় অনেক কম লাগছে। পরিশ্রমও কম হচ্ছে। ধরা পড়ছে সব মাছ। কিন্তু একটা বিষয় তাঁরা ভাবছেন না যে, এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা হলে মাছসহ জলাশয়ের সব জীব-অণুজীব মারা যায়। এতে করে জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়।


অসাধু ব্যক্তিরা দ্রুত ও সহজে মাছ ধরার জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ ধরছেন। এমিল নাইট্রেট এমন এক ধরনের মাছ ধরার বিষ। এটি হলুদ রঙের তরল পদার্থ। এটি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত প্রচুর মাছ ধরা যায়। অল্প সময়ে অধিক মাছ ধরা যায় বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়। এই বিষটি কখনো পানিতে মিশিয়ে দিয়ে মাছ মারা হয়, আবার কখনো মাছের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে পানিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এমিল নাইট্রেটের কারণে পানিতে অক্সিজেন খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। এতে মাছেরা শ্বাসকষ্টের কারণে পানির উপরিভাগে আসে। সে সময় সহজেই মাছ ধরা যায়। কিন্তু এটি ব্যবহারের কারণে মাছ ছাড়া জলজ অন্যান্য প্রাণীও মারা পড়ে। যেমন কচ্ছপ, কাঁকড়া, শামুক ইত্যাদি। এটি মাটির তলদেশে জমা হয়ে মাছের গুণাগুণও নষ্ট করে দেয়। এমিল নাইট্রেট বিষ প্রয়োগে ধরা মাছ খেলে মানুষেরও নানা সমস্যা হয়। এটি মানবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর ফলে বমি, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের মাছ বেশি খেলে কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভবতী নারীরা এই ধরনের মাছ খেলে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া ত্রুটি নিয়ে বাচ্চা জন্ম হতে পারে। অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়।

সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মৎস্য শিকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে ভয়াবহ হুমকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একশ্রেণির অসাধু জেলের


কাজ এসব। তাঁরা সুন্দরবনের খালে জোয়ারের আগে চিড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে ছিটিয়ে দেন। এতে করে অভয়ারণ্যের খাল থেকে অল্প সময়ে অনেক মাছ ধরা যায়। ফসলের পোকা দমনে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েই এইসব মাছ ধরা হয়। সাধারণত ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড ও পেসিকল নামক কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরা হয়। এসব বিষ প্রয়োগ করা হলে খালের ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ও পোনা মারা যায়। এসব বিষমিশ্রিত পানি গভীর সমুদ্রে গিয়ে সেখানকার প্রাণীরও ক্ষতি করে। এই বিষ তাৎক্ষণিকভাবে শুধু মাছই মেরে ফেলে না, এটি দীর্ঘদিন খালে বা সমুদ্রে থাকার ফলে জলজ নানা প্রাণীও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে করে মাছের প্রজননক্ষমতা কমে যায়। মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে এর ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রাণীরও খাদ্য-সংকট দেখা দেয়। তা ছাড়া বিষযুক্ত মাছ খেয়ে পাখি ও বড় মাছেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে সুন্দরবন আমাদের বাঁচায় তাকে বাঁচাতে আমাদের প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসা উচিত। সুন্দরবনের খালগুলোতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার যে মাত্রায় বেড়েছে তাতে সহজেই অনুমেয়—প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে সুন্দরবন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও