
হলুদ কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে
ডায়াবেটিস আজকের দিনে সবচেয়ে সাধারণ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলোর একটি। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন, যা খাবার থেকে পাওয়া গ্লুকোজকে (শর্করা) শক্তিতে রূপান্তর করে। ইনসুলিনের ঘাটতি বা সেটি কাজ করতে না পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনি, চোখ, স্নায়ু ও হৃদ্যন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধের পাশাপাশি কিছু ভেষজ উপাদানও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে হলুদ অন্যতম।
প্রাচীন চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার
হলুদ শুধু রান্নার স্বাদ ও রং বাড়ায় না। বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ ব্যবহার করা হয়—
- হজমের সমস্যা দূর করতে
- যকৃতের কার্যকারিতা উন্নত করতে
- বাত ও আর্থ্রাইটিস ব্যথা কমাতে
- ক্ষত বা প্রদাহ সারাতে
- আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও হলুদের সম্ভাব্য গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করছে।
হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন
হলুদের মূল উপাদান কারকিউমিন। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে—
- কারকিউমিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।
- এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
- ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে যে প্রদাহ ও কোষের ক্ষতি হয়, কারকিউমিন তা হ্রাস করতে সহায়ক।
- দীর্ঘ মেয়াদে কারকিউমিন ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, যেমন স্নায়ুর ক্ষতি, হৃদ্রোগ, কিডনির ক্ষতি ইত্যাদি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
২০২১ সালে প্রকাশিত একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার পর্যালোচনায় বলা হয়—
- কারকিউমিন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়। ফলে শরীর ইনসুলিনকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে।
- কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- এমনকি সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও নিয়মিত হলুদ খাওয়ার অভ্যাস ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।