মাটির খেলা থেকে স্ক্রিন প্রজন্ম: গল্প হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলাধুলা

বিডি নিউজ ২৪ অলোক আচার্য প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৭

সময়ের হিসেবে খুব বেশি নয়, মাত্র কয়েক দশক আগের কথা। তখনো গ্রাম-গঞ্জে চোখে পড়ত শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড়, দৌড়াদৌড়ি। খেলার এত রকমফের ছিল যে সবগুলো গুণে বের করতে হিমশিম খাওয়া লাগত। আশির ও নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা মানুষের কাছে সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।


রতন পোদ্দার, ষাট পেরোনো এক মানুষ, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্মৃতিমেদুর কণ্ঠে বলছিলেন সেই দিনগুলোর কথা— “আমরা তখন সকাল আর সন্ধ্যা—এই দুবেলা পড়াশোনা করতাম। এটাই ছিল আমাদের রুটিন। বাবার সাথে মাছ ধরতে যেতাম কখনও-সখনও। বাকি সময় ঘুড়ি উড়িয়ে, দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি ও লুকোচুরি খেলে কাটিয়ে দিতাম। ‘মাটির দোকান’ সাজিয়ে মিছিমিছি বেচাকেনা করতাম। এই রকম কত খেলাধুলা যে করতাম—এক খেলা শেষ হতে না হতেই আরেক খেলা শুরু হতো। ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে একসাথে খেলতাম। সন্ধ্যার আগে কেউ ঘরে ফিরত না। সন্ধ্যার পরে আবার বাইরে থাকার অনুমতি ছিল না। মোবাইল ফোন তো দূরের কথা রেডিও- টেলিভিশন পর্যন্ত ছিল না। মাঝেমধ্যে সন্ধ্যের পর যাত্রাপালা দেখতে যেতাম, সে-ও বড়দের সাথে। এই এলাকাতেই—পাবনার বেড়ার নাকালিয়ায়—অনেক যাত্রা হতো। এখন তো ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গাও নেই, আর এসব খেলার প্রতিও তাদের কোনো আগ্রহ দেখি না।”


শেষ কথাগুলো বলতে বলতে আফসোস মিশে যায় তার কণ্ঠে। তার কথা শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, সত্যি তাই যুগের চাকা এগিয়ে চলেছে, আমাদেরও এগোতে হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের বিশ্বাস, মেধা আর শারীরিক পরিশ্রমের সক্ষমতা।


একসময় যখন ক্যালকুলেটর ছিল না বা তেমন ব্যবহার হতো না, তখন হিসাবের জন্য মানুষ মগজখাটাত। তখন সময় লাগলেও সহজ হিসাবগুলো দ্রুতই করতে পারতাম আমরা।


কিন্তু যখন ক্যালকুলেটরের বহুল ব্যবহার শুরু হলো, তখন থেকে সহজ হিসেবের জন্যও যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। এতে সময় ও নির্ভুলতার দিক থেকে সুবিধা হলেও, ধীরে ধীরে আমরা অলস হয়ে উঠেছি।


আজকের দিনে এমনকি দুইয়ে দুই যোগ করার জন্যও অনেকে ক্যালকুলেটর খোঁজে।


পরিশ্রম করতে আমরা আর আগ্রহী নই, চিন্তা করতে চাই না, মগজ ব্যবহার করতে যেন ভয় লাগে। প্রযুক্তি আমাদের শুধু অলসই করেনি, অনেক সময় বিরক্তিকরও করে তুলেছে।


রাত গভীর হলে যখন মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে, তখন সেটা ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে অনেকে সারাক্ষণ চিন্তিত থাকে। অথচ একসময় আমাদের জীবন এতটা ব্যস্ত, একঘেয়ে, আর প্রযুক্তিনির্ভর ছিল না।


গ্রামের থাকার কারণে আমি এখনো কিছু কিশোর-কিশোরীকে খেলাধুলা করতে দেখি। তারা এখনো কিছু পুরনো খেলা খেলতে পারে, তবে সময় খুব সীমিত।


এই চিত্র গ্রাম আর শহরে ভিন্ন। শহরের অধিকাংশ শিশুই এসব গ্রামীণ খেলা চেনে না, খেলেও না। ওদের সময় কাটে স্কুল, প্রাইভেট, কোচিং, মোবাইল ফোন আর চার দেয়ালের ভেতরে বন্দি জীবনে। এটাই তাদের 'বিনোদন' হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলার মাঠ নেই, উপযুক্ত পরিবেশও নেই। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটা বড় প্রশ্ন। অভিভাবকরাও চান না যে সন্তানরা বাইরের মুক্ত পরিবেশে গিয়ে বিপদে পড়ুক।


শিশুদের সামনে কেবল প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতা। খেলার নামে শহরের ছেলেরা হয়তো কিছুটা ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে, কিন্তু অন্য কোনো খেলার চর্চা নেই বললেই চলে। আর মেয়েরা তো প্রায় ঘরের কোণেই থেকে যায়।


গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের এখনও কিছুটা স্বাধীনতা আছে। অনেক জায়গায় তাদের স্কুলের মাঠে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। তারা এখনো কয়েক দশক আগের কিছু খেলা খেলে, যেমন—দাঁড়িয়াবান্ধা, লুকোচুরি কিংবা ঘুড়ি ওড়ানো।


একটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা খেলতে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলছিল—"আমরা মেয়েরা শুধু স্কুলেই এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে পারি। বাইরে নয়।"


তারা জানায়, স্কুলের বাইরে ছেলেরা কেউ কেউ মাছ ধরা, ঘুড়ি ওড়ানো কিংবা অন্যান্য ছোটখাটো খেলা খেলে। তবে প্রশ্ন করলে দেখা যায়, দু’-তিনটি খেলার বাইরে আর কোনো খেলার নামই বলতে পারে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও