
বিএনপির জনসমর্থন ১৬ শতাংশ, জামায়াতের ৩১ শতাংশ—কতটা বিশ্বাসযোগ্য
নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ধরনের জরিপের ফলাফল আমাদের সামনে আসছে। কমবেশি সব দেশেই নির্বাচনের আগে নানা ধরনের জরিপ পরিচালনা করে কিছু আগাম ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংগঠন নিজস্ব উদ্যোগে জরিপ করে নির্বাচনী মাঠের পরিস্থিতি অনুধাবনের চেষ্টা করে। বোদ্ধারা এসব জরিপের ফলাফলের সঙ্গে নিজস্ব ধারণার সংশ্লেষ ঘটিয়ে রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন।
অনেক সময় এসব জরিপের ফলাফল বাস্তবের সঙ্গে মেলে, আবার অনেক সময় মেলে না। জরিপের ফলাফলকে নাকচ করে দিয়ে নির্বাচনে উল্টো ফল বেরিয়ে আসে কখনো কখনো। ভোটের হিসাব–নিকাশ আদৌ কোনো সহজ কাজ নয়। তাই জরিপের ফলাফলও অনেক সময় ভুল প্রমাণিত হয়।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জরিপ পরিচালনা করলে নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে তা না মেলার আশঙ্কাই বেশি থাকে। তারপরও অনেক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করে।
গবেষণা প্রক্রিয়ার (রিসার্চ মেথডলজি) ভাষায় এই ধরনের জরিপকে বলা হয় বায়াসড বা পার্পাসিভ সার্ভে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যা আশা করেন বা যে ধরনের ফলাফল দেখতে চান, সেদিকে লক্ষ রেখে জরিপের নকশা তৈরি করা হয়। জরিপে মাঠের প্রকৃত চিত্র যেমন তুলে আনা সম্ভব। আবার নিজস্ব পছন্দ অনুসারে ফলাফলও তৈরি করা যায়। এটা নির্ভর করে গবেষণা জরিপের তথ্য–উপাত্ত ও নমুনা সংগ্রহের কাঠামো নির্ধারণের ওপর।
ধরা যাক, জার্মানির বন শহরে ধূমপানের প্রবণতা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে। এখন বন শহরের কেন্দ্রীয় বাস ও রেলস্টেশন, পানশালার আশপাশে বা ভেতরে জরিপ পরিচালনা করলে ধূমপানের পক্ষে ফলাফল পাওয়া যাবে।
আবার বন শহরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, বন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করলে ধূমপান সম্পর্কে নেতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে। বন শহরের পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর জরিপ পরিচালনা করলে হয়তো প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু এটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়। এত লম্বা সময় ধরে জরিপ সাধারণত নির্বাচন বা জনমত জরিপের গবেষণায় করা হয় না।
সম্প্রতি দেশে নির্বাচনকে ঘিরে এ ধরনের কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। আগেই বলে রাখা ভালো এই জরিপগুলোকে ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করা কঠিন। গবেষণা পরিকল্পনা, নমুনার আকার ও সংগ্রহ করার পদ্ধতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করেই জরিপ করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল এসেছে কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে।
যেমন শেখ হাসিনার শেষ দিকে বিভিন্ন জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তিনি আবার ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনে ৫ শতাংশ মানুষও ভোট প্রদান করেননি। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও ভোটকেন্দ্রে যাননি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে ওই জরিপগুলো ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ঠিক একই রকম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জরিপের এখন ছড়াছড়ি চলছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের অক্টোবরে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেল, ওই সময় ভোট হলে মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ বিএনপি সমর্থন করবেন। ৩৮ শতাংশ মানুষ কোনো দলকেই সমর্থন করছেন না। কিন্তু ওই সময় বিএনপির প্রতি জনসমর্থন ছিল তুঙ্গে।