গত এক বছরে সামগ্রিক অর্থনীতির লক্ষ্যন ভালোর দিকে গেলেও ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা ট্রাকের পেছনে মানুষের ভিড় কমেনি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নতির আড়ালে ক্ষুধা এখনো তীব্রভাবে আঁকড়ে ধরে আছে নিম্নআয়ের মানুষকে।
ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয় সকাল ৯টার দিকে। কিন্তু, না পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে লাইনের শুরুর দিকে দাঁড়াতে ভোর থেকেই মানুষ চলে যায় ট্রাকের অপেক্ষায়, দীর্ঘ হতে থাকে সারি।
প্রচণ্ড গরম কিংবা ভারী বৃষ্টি—তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে লাইনে। ঠেলাঠেলি, তর্ক, ঝগড়া, এমনকি মারামারি করে হলেও সামনের দিকে থাকা নিশ্চিত করতে চায় শুধু বাজারদরের চেয়ে একটু কম দামে চাল, ডাল, তেল পাওয়ার জন্য। প্রথম দিকে মানুষগুলোকে পণ্য দিতে দিতে ট্রাক খালি হয়ে যায়, লাইনের একটু পেছনে পড়া অনেককে ঘরে ফিরতে হয় খালি হাতে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৯৫ লাখ—যা এ বছর পৌঁছাবে ১ কোটি ৫০ লাখে। যাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্ট (প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা হিসাবে প্রায় ২৬০ টাকা) বা তার কম, তাদের জন্য দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি মানে হলো ক্ষুধা, আর অনেক ক্ষেত্রে অনাহার।
এই গোষ্ঠীর চেয়ে একটু ভালো যারা যারা আছে—অর্থাৎ, যাদের আয় এই শ্রেণীর চেয়ে একটু বেশি—তারা মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কোপ বসাতে বাধ্য হয়েছেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। পুষ্টি কমিয়েছে, চিকিৎসা খরচ এড়িয়েছে, এমনকি অনেকে সন্তানদের স্কুল পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছেন। এগুলোকে আষাঢ়ে গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটু চোখ মেললেই এর সত্যতা পেয়ে যাবেন যে কেউ।