You have reached your daily news limit

Please log in to continue


মিয়ানমারে পরাশক্তির উপস্থিতি : বাংলাদেশের নিরাপত্তা

মিয়ানমার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। একুশ শতকের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথচলায় আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। মিয়ানমারে মূল্যবান বিরল খনিজ এবং এর পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুযোগ মিয়ানমারকে পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ২০২১ সালে সামরিক জান্তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। চলমান এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাখাইনের জাতিগত সশস্ত্র দল আরাকান আর্মি রাখাইনে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান এবং রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরতলির মধ্যে ১৪টি আরাকান আর্মির দখলে এবং সমগ্র আরাকানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সংঘর্ষ চলছে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাত এবং মিয়ানমারসৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তায় প্রভাব পড়ছে এবং নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রাখাইনে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করায় সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়ছে।

চলমান এ সংকটময় পরিস্থিতিতেও রাখাইন রাজ্যে চীন ও ভারতের বিনিয়োগ ও বিভিন্ন স্থাপনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনে তাদের উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী। রাখাইনে চীন ও ভারতের বিনিয়োগ ও বিদ্যমান স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা, রাশিয়া ও আমেরিকার ভূকৌশলগত আগ্রহ এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে। মিয়ানমার ও রাখাইনে পরাশক্তির উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অনিশ্চিত হয়ে যাবে, চলমান সংকট আরও জটিল থেকে জটিলতর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, সীমান্ত নিরাপত্তা, অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচার, বাংলাদেশের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীদের উত্থানের মতো নিরাপত্তা সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর তার চাপ পড়বে। আরাকান আর্মির হাতে থাকা প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে পারে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মিয়ানমার জান্তা নতুন করে রাখাইনের ওপর আক্রমণ চালালে সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে।

রাখাইনে শান্তি ফিরে না এলে এবং রাখাইনে রোহিঙ্গা সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংঘাত চলমান থাকলে রাখাইনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ সম্ভব হবে না, ফলে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন হবে না। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে এবং সামনের দিনগুলোতে ত্রাণ সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এতে বাংলাদেশের ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে আরাকান আর্মির সঙ্গে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় টেকনাফ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যও বন্ধ রয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমার এবং রাশিয়া ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ায়। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানের বিরোধিতা করেছে। জান্তাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন আং হ্লাইং ক্ষমতা গ্রহণের পর চারবার রাশিয়া সফর করেন। রাশিয়া মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র ও অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া মিয়ানমার বিমান বাহিনীকে ছয়টি সু-৩০ এসএমই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে। মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে বিমান হামলা এবং সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৬২ জন নিহত হয়েছে। রাশিয়া রাখাইনে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। রাশিয়া তার উৎপাদিত পণ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাজারজাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য রাশিয়া ভারতের ভেতর দিয়ে মিয়ানমার হয়ে একটি বাণিজ্য করিডর গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। মিয়ানমার ও রাশিয়া ভারতকে এই নতুন প্রকল্পে যুক্ত করতে চাইছে।

২০০৮ সালে শুরু হওয়া কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত রাজ্যগুলোর পরিবহণ সহজ করতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এ প্রকল্পের সমুদ্র ও নদী অংশের কাজ শেষ হলেও ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ বাকি রয়েছে, ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার অঙ্গীকার করেছে। আঞ্চলিক কৌশল এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য হিসাবে ভারত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রস্তাবিত রাশিয়া-ভারত-মিয়ানমার করিডর ভারতের চলমান কলাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

রাখাইনের চকপিউ গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে চীন তার জ্বালানির একটা বড় অংশ নিজ দেশে পাঠাতে শুরু করেছে। চকপিউ থেকে কুনমিং পর্যন্ত সরাসরি চীনের পাইপলাইন রয়েছে। চীন রাখাইনে বেশকিছু বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনেও বিনিয়োগ করেছে। চীন তাদের স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।

মিয়ানমার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টের মূল লক্ষ্য হলো বার্মার অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পথ পুনরুদ্ধার করা, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিমান ও উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় দুর্লভ খনিজ সংগ্রহে চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে মিয়ানমারের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। মিয়ানমার এ খনিজের একটি বড় বিকল্প উৎস হতে পারে। চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের খনিজ অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এই খনিজ উত্তোলন করতে গেলে এতে বাধা দিতে পারে এবং এর ফলে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি মিয়ানমার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলের প্রশংসা করে একটা চিঠি পাঠায়। এর পরই জান্তাঘনিষ্ঠ তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ও ব্যবস্থাপনাকারী ব্যক্তিদের নামও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারের দুর্লভ খনিজ সম্পদ পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলার সময় এখনো আসেনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন