চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান মানেই হলো, যে অভ্যুত্থানে গণসম্পৃক্ততা আছে। কোনো আন্দোলনে জনসংশ্লিষ্টতা না থাকলে কখনো তা গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয় না। কেউ নেতৃত্বে থাকে, কারো আহ্বান থাকে, কেউ হয়তো সামনে থেকে আন্দোলনটা শুরু করে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে যখন এর সঙ্গে জনসংশ্লিষ্টতা তৈরি হয় তখন সেটা গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। তখনই একটি রেজিম বা শাসনের পতন হয়। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সেটাই হয়েছে।
ছাত্রদের যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিল, সেখানে জনগণের একটা বড় আকাঙ্ক্ষার জায়গা ছিল। এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সব মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। কারণ গত ১৫ বছরের যে রেজিমটা আমরা দেখেছি সেখানে সমাজে নানা ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার যে একটা অধিকার সেটাও তো নানাভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল। ফলে সাধারণ মানুষ যখন এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তখন তারা তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ বছরের রেজিমের সবচেয়ে অন্ধকার দিক ছিল মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা। বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানো। বিরোধী মতকে গুম-খুনের মাধ্যমে স্তব্ধ করে দেয়া। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, আইনের শাসন—এ সব কিছু নিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণের একটি বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে তার কোনো কিছুরই বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পায়নি। মানুষের জীবনে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।