জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন। তাতে প্রশংসার তুলনায় সমালোচনার দিকগুলোই বেশি সামনে এসেছে। সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতার আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থনীতি, বিচার সংস্কার এবং মব সন্ত্রাসের মতো ইস্যুগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতাসংক্রান্ত আলোচনায় অর্থনীতিতে ব্যাংক, বাজার, রিজার্ভসহ সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকার কৃতিত্ব পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে যে প্রবল ঊর্ধ্বগতি হয়েছিল, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মব সন্ত্রাস, মামলা-বাণিজ্য, জামিন-বাণিজ্য, মৌলিক সংস্কার, এমনকি বিচারপ্রক্রিয়ার কিছু বিষয়ে সরকারের ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের সামনে তিনটি বড় দায়িত্ব ছিল সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই শুরু হয়েছিল ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাঙার তাণ্ডব। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও চলতে থাকে ভাস্কর্য, মাজার ইত্যাদি ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ধারা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক বছরে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রায় দুই হাজার স্মারক, ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম ধ্বংস করা হয়েছে। মাজার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শতাধিক। নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং মিডিয়া হাউস দখল করা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগে এক দলের অনুসারী লোকজনের বদলে অন্য দলের পক্ষের লোকজন বসানো ছাড়া কার্যকর কোনো পরিবর্তন হয়নি।