
অর্জন, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ প্রতিবন্ধকতা
গত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। তাদের শাসন আমলে একটি নতুন অর্থবছরেরও সূচনা হয়েছে। আজ বছর পেরিয়ে অনেকেই পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন—অর্জন কতটুকু, ব্যর্থতা কোথায় এবং অন্তরায় কী কী? এমন একটি হিসাব-নিকাশ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনায় এসেছিল, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় ছিল। প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্তই অর্থনীতির নানান দুর্বলতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছিল এবং এটা খুব পরিষ্কার ছিল যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি সংকটের মধ্যে ছিল। অর্থনীতির আপাত দৃশ্যমান সমস্যা ভিন্ন। নানান কাঠামোগত সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছিল। যেমন অর্থনৈতির শৃঙ্খলার অভাব, সুশাসনের অনুপস্থিতি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, দৃশ্যমানতা ও দায়বদ্ধতার ভেঙে পড়া কাঠামো, অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, দেশের সম্পদ পাচার, সরকারি উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস ইত্যাদি।
গত ১২ মাসে অর্থনীতির বিভিন্ন অঙ্গনে কিছু কিছু উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। যেমন বৈদেশিক মুদ্রা মজুত এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের কিছু কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে, বিদেশ থেকে শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যও কিছুটা নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কযুদ্ধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা আদায় করতে পেরেছে।
সেই সঙ্গে নানান অর্থনৈতিক ব্যর্থতার কথাও বলেছেন অনেক বিজ্ঞজন। অর্থনৈতিক শ্লথতা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৩-৪ শতাংশের বেশি নয়। দেশজ উৎপাদন তার আগের জায়গায় ফেরত যায়নি। কর্মনিয়োজনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। দেশের ২৭ লাখ মানুষ এখনো বেকার।
যদিও মূল্য পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, কিন্তু দেশের মূল্যস্ফীতি এখনো খুব বেশি। বাজারে চালের দাম এখনো কমেনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ এখনো বিরাজমান, এবং তারা এখনো স্বস্তির মুখ দেখতে পাচ্ছে না। অর্থনীতিতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। অর্থনীতিতে দেয় ভর্তুকি এবং বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট বোঝা হয়ে থাকছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আরও ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়তে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থবছরের বাজেটকে ‘প্রথাগত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এ বাজেট জনগণকে উদ্দীপ্ত বা উজ্জীবিত—কোনোটাই করতে পারেনি।
এ পটভূমিতে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় কী কী অন্তরায় আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। তিন রকমের অন্তরায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে—একটি রাজনৈতিক, অন্যটি সামাজিক এবং তৃতীয়টি অর্থনৈতিক। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অন্তরায়গুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে চলবে না, এগুলো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চালচিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বর্ষপূর্তি
- অন্তর্বর্তী সরকার