অশীতিপর বৃদ্ধ ইদ্রিস শেখ কেন জামিন পাবেন না?

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৩৯

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফারাবী অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল করে ফারাবী। আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দিয়েছে। শুধু জানতে ইচ্ছা করছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি কীভাবে জামিন পায়? আর অশীতিপর বৃদ্ধ একজন ইদ্রিস শেখ কেন জামিন পাবেন না?


ভিডিওতে দেখলাম বৃদ্ধ ব্যক্তিকে একজন পুলিশ সদস্য হাত ধরে সিঁড়ির কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই বৃদ্ধের ডান হাতে একখানা লাঠি। লাঠির ওপর ভর দিয়ে তিনি সিঁড়ির দিকে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই সেই সিঁড়ি বেয়ে তিন তলা থেকে দোতলায় নামতে পারছিলেন না। দুজন পুলিশ কনস্টেবল অশীতিপর এই বৃদ্ধের দুই বাহু ধরে ছিলেন। ইদ্রিস শেখ হাঁপাচ্ছিলেন। একশ বছরের বেশি বয়সী ইদ্রিস শেখকে যখন নিচতলার হাজতখানার সামনে আনা হয়, তখন তাঁর ছেলে বাবুল শেখ বাবার দুরবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেন। বাবুল শেখের বয়সও ৭০ এর বেশি।


সেই কবেকার একটি মামলার আসামি ইদ্রিস শেখ। ইদ্রিস শেখ হাজতখানার ভেতরে ঢুকে যান। তখন হাজতখানার সামনেই অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁর ছেলে বাবুল শেখ। বাকি তিন ছেলে মারা গেছেন। ইদ্রিস শেখের বয়সী আর কেউ এলাকায় বেঁচে নেই। বহু বছর আগে একটি খুনের মামলার আসামি হন তিনি এবং সেই মামলার ঘানি টেনে চলেছেন এখনো।


বৃদ্ধ বাবার কষ্ট দেখে ছেলে বাবুল শেখ কাঁদতে থাকেন। ইদ্রিস শেখ যখন প্রিজন ভ্যানের ভেতরে, তখন অন্য বন্দিরা তাঁকে উঁচু করে ধরেন। ভ্যানের জানালা দিয়ে তাকিয়ে ইদ্রিস শেখ কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি ছেলেকে বলছিলেন, আমার জামিনের ব্যবস্থা করো। বাবুল শেখও বাবাকে দেখে কাঁদছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর ইদ্রিস শেখকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। বৃদ্ধ বাবুল শেখ হতবিহ্বল চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।


ইদ্রিস শেখের দুর্দশার এই খবর ছাপা হয়েছে প্রথম আলো পত্রিকায়। খবরটি পড়ে খুব মায়া লাগলো। এই প্রথম একজন অভিযুক্ত আসামির জন্য মায়া লাগলো। আসামি অশীতিপর বৃদ্ধ, হাঁটতে পারেন না, সিঁড়ি বাইতে পারেন না, মাটিতে বসতে পারেন না, প্রিজন ভ্যানে উঠতে পারেন না এবং ভ্যান থেকে আকাশ দেখতেও পারেন না। অথচ তাকে হয়তো আরো বহুবছর বিচারের জন্য আদালতে আসতে হবে এবং আবারো এই ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হতে হবে। যতোই দুর্দশা হোক, আদতে ওনার জামিন হবে কিনা আমরা জানিনা। হলেও কবে হবে তাও বলতে পারি না। অথচ এই দেশেই পয়সা ও ক্ষমতার জোরে জামিনে বেরিয়েই খুনোখুনিতে জড়িত হয়েছে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে রাজধানীর ২৭ দাগি সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দাগি আসামিরা বের হয়ে এসে আবার সুসংগঠিত হচ্ছে এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কেউ বসে নেই। সবাই আধিপত্য বিস্তার করতে নতুন ও পুরোনো সহযোগীদের দলে ভিড়িয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মেতে উঠেছে।


বড় অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে আবারও আগের মতো তৎপরতা শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে দূরত্ব কমানোর জন্য ব্যবহার করছে কিশোর গ্যাং সদস্যদের। এরা তাদের পুরোনো পয়েন্টে ফিরে গিয়ে চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুর, ছিনতাই, রাহাজানিতে জড়িত হয়ে পড়ছে। অথচ ইদ্রিস শেখের মতো একশ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ অভিযুক্ত আসামি কাঁপতে কাঁপতে চলে গেলেন কাশিমপুর কারাগারে। আমি নিজে যেহেতু অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারি না, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারি না, মাটিতে বসতে পারি না, তাই আমি বুঝতে পারছি বৃদ্ধ ইদ্রিস শেখের কতখানি কষ্ট হচ্ছে। আমরা আশা করবো আদালত শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত ইদ্রিস শেখকে জামিন দেবেন। আশা করা যায়, আর যাই হোক, জামিন পেয়ে উনি অন্তত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো হানাহানিতে জড়িয়ে পড়বেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও