চব্বিশের অভ্যুত্থান যে কারণে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল

বণিক বার্তা আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:২৭

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সংকট হচ্ছে সবার কাছে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য কোনো রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করা যায়নি অথবা কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য এখনো তৈরি করতে পারেনি, যার ভিত্তিতে পুরো জাতি একত্র হতে পারে চিন্তায়, মননে ও কর্মে, যদিও ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজস্ব কর্মসূচির আলোকে তার রাজনীতি করবে। ১৯৬৬ সালে ঘোষিত ‘ছয় দফা’ ছিল সাম্প্রতিক সময়ে এ জমিনের জনগণের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে জনমানসে (পূর্ব পাকিস্তান) আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে।


মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র না থাকলেও ভারতে অবস্থিত অস্থায়ী প্রবাসী সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধের লিখিত ঘোষণাপত্র পাঠ করে। যাদের চিন্তার ফসল ছিল সেই ঘোষণাপত্র, তারা যে পরিষ্কারভাবেই ফরাসি বিপ্লব ও বলশেভিক বিপ্লব দ্বারা ব্যাপকমাত্রায় প্রভাবিত ছিলেন, সেটা সহজেই অনুমেয় ছিল; আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও কমিউনিস্ট ইশতেহারের বিভিন্ন দিকও সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে আসে। মদিনায় হিজরতের পরে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে স্বাক্ষর করা ‘মদিনা সনদ’-এ উল্লেখিত ইনসাফ, ধর্ম পালন ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে স্বীকার করার যে ন্যায্যতা ছিল, তাও এখানে সমভাবে উঠে এসেছে; নয় মাসের জনযুদ্ধকে বৈষম্যের বিপক্ষে ‘জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রের শুরুর অংশে পাকিস্তানের সঙ্গে তালাকনামার কারণ বর্ণনা করে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামক নতুন রাষ্ট্র ঘোষণার প্রেক্ষাপট ও চরিত্র তুলে ধরা হয়। এটা যে রাজ্য না বা কোনো ভিনদেশী ব্যক্তি বা পরিবারের উপনিবেশ নয়, সেটা পরিষ্কার করা হয়েছিল ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ শব্দযুগল দিয়ে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিসের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র শাসন করা হবে, যা আগের পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হবে, বৈষম্যহীন হবে, সেটা উল্লেখ করা হয়েছিল: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার।


১৯৭২ সালের নভেম্বরে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে চার দফা মূলনীতির উল্লেখ করা হয়েছে: ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র, যা শুধু সংবিধানেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সংবিধানেও জায়গা করে দেয়া হয়েছে, যদিও স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ছিল না। এই সাংবিধানিক কাঠামোয় তৃতীয় ও চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়, ‘গণতন্ত্র’ নামক সাংবিধানিক মূলনীতির কবর রচিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল (জেনারেল) ওসমানী, ব্যারিস্টার মঈনুলের মতো গুণীজনদের পদত্যাগ করতে হয় একদলীয় শাসনের প্রতিবাদে।


চাকমাসহ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ কায়েম করা গেলেও রাষ্ট্রের সংহতি প্রশ্নের মুখে পড়ে। সমাজতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে কোনো পূর্বপরিকল্পনা ব্যতীত দেশের সব কলকারখানাকে গণহারে জাতীয়করণ করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও লুটপাট দেশের অর্থনীতির চাকাকে স্থবির করে দেয়। সব মিলিয়ে চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালনা একরকম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়।


১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের চার মূলনীতিতে আবারো পরিবর্তন আসে। ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ভূখণ্ডভিত্তিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে রূপান্তর করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়। সমাজতন্ত্রকে পুঁজি ও ব্যবসাবান্ধব করে ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার’ অর্থে ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু এ পরিবর্তন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেলেও আওয়ামী ও বাম ঘরানার সমর্থকগোষ্ঠী কখনো মেনে নিতে পারেনি।


ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই ইসলামসংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ যোগ ও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করায় এ অস্বস্তি আরো বাড়ে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাম ও জাসদের অব্যাহত সামরিক ক্যু ও প্রতিবিপ্লব দেশকে অনিবার্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। পর পর দেশের দুই জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতিকে প্রাণ দিতে হয় ছয় বছরের ব্যবধানে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ ক্ষমতার পালাবদলে সংবিধানের শাসনতান্ত্রিক মূলনীতিও বারবার পরিবর্তন হয়েছে। প্রশ্ন হলো আর কতদিন এভাবে চলবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও