জুলাই কি পথ হারাবে

www.ajkerpatrika.com অরুণ কর্মকার প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২৪

একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র এক বছরের মধ্যে প্রশ্নটি সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক দেশ এবং ‘দায় ও দরদের সমাজ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল, গত এক বছরের চলার পথ তার ধারেকাছেও নেই। বরং এক বছর ধরে দেশবাসী দেখে এসেছে, ক্রমান্বয়ে তারা একটি দায়হীন, বেদরদি ও নির্লিপ্ত শাসনব্যবস্থার অধীনস্থ হয়ে পড়েছে। যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তির স্বপ্ন তাদের উজ্জীবিত করেছিল, গত এক বছরে ওই দায়হীন নির্লিপ্ততা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই তারা দেখেনি, যা সেই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আলাদা কিছু। ফলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিষয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, জুলাইকে তারা গ্রহণ করেছিল ভরসাস্থল হিসেবে। অভ্যুত্থানের এক বছর পর আজকের যে বাস্তবতা, তা দেশবাসীর কাছে একেবারেই ভিন্ন।


এক বছর আগে, কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয়ভাবেই একটি অভিমত প্রকাশিত হয়েছিল যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কেননা, জাতীয় প্রত্যাশা ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দেশের সামনে যে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের অমিত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, তা কোনোভাবেই হারানো যাবে না। এই অন্তর্বর্তী সরকারই পারবে সেই রূপান্তরিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি রচনা করতে। কিন্তু আজকের জাতীয় আলোচনা হলো, বাংলাদেশ কি এবারও সুযোগ হারাল? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ছাত্রনেতাদের তাঁর নিয়োগকর্তা বলে অভিহিত করেছেন, সেই ছাত্রনেতারাই তাঁর সরকারের অদক্ষতা, নির্লিপ্ততার কড়া সমালোচনা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রস্থানও দাবি করছেন।


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক ঐক্য। সব মত-পথ-ধর্ম-বর্ণের মানুষ সেখানে শামিল হয়েছিল। সব ব্যক্তি-গোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল। তারই সম্মিলিত ফল ছিল গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই বৃহত্তর ঐক্য বজায় রাখতে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। ফলে যে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তা অভ্যুত্থানের চালিকাশক্তিকে ছিন্নভিন্ন করে গণ-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। এই রাজনৈতিক বিভাজনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে, নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা কিংবা নির্লিপ্ততা সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও ভীতিকর করে তুলেছে। এসবের অনিবার্য পরিণতি হলো পুরোনো ব্যবস্থার প্রবর্তন। সম্পূর্ণ পুরোনো ব্যবস্থা না হলেও, মৌলিক পরিবর্তনহীন একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন তো বটেই। বাস্তব পরিস্থিতি যখন এই শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তখন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো ভূত দেখছে—আওয়ামী লীগের ভূত। যেখানে যা কিছু অঘটন ঘটছে তার পেছনেই আওয়ামী লীগের ছায়া এবং ষড়যন্ত্র দেখছে। স্মরণযোগ্য, একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকারও সবকিছুর পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র দেখতে পেত।



জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান আকাঙ্ক্ষা বা লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কার। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সংস্কার গভীর না হলে, মনের গভীরে সংস্কার করতে না পারলে ঘুরেফিরে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ফিরে আসতে পারে। এর আগে তিনি কম সংস্কার এবং বেশি সংস্কারের কথা বলেছিলেন নির্বাচনের সময় নির্ধারণের প্রশ্নে। এই সংস্কার নিয়ে আলোচনা, বৈঠক, অধ্যবসায় অনেক দিন ধরেই অব্যাহতভাবে চলছে। সংস্কার সম্পর্কে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যা জানা-শোনা যায়, তাতে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া বিশেষ কোনো মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে, সেই সম্ভাবনা এখনো সৃষ্টি হয়নি। হয়তো এখনো গভীর সংস্কার করার মতো বা হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় আছে। আমরা হয়তো ঠিকঠাক জানি না কিংবা বুঝতে পারছি না। তবে একটি বিষয় দেশবাসী বুঝতে পারছে যে মৌলিক সংস্কার, গভীর সংস্কার নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। জটিলতাও আছে।


সংস্কারের পাশাপাশি বিচারের প্রক্রিয়াও চলমান আছে। শুরু করা হয়েছে নির্বাচনের প্রক্রিয়াও। তবে সেটা কতটা বাস্তবানুগ আর কতটা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝ দেওয়ার জন্য, আমরা জানি না। সন্দেহটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকেই বাতাসে ছড়াচ্ছে। আরেকটি বিষয় একেবারে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। সেটি হলো চাঁদাবাজি। শুধু চাঁদাবাজি বলে এই ভিন্নমাত্রার বিষয়টি বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ, চাঁদাবাজি স্বৈরশাসকদের সময়েও ছিল। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরও অব্যাহতভাবে আছে। কেবল পরিবর্তন হয়েছিল চাঁদাবাজদের। পুরোনোদের স্থান দখল করেছিল নতুনেরা। তাতে প্রধান অভিযুক্ত ছিল বিএনপির নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিতরা।


এমন অনেকের বিরুদ্ধে বিএনপি দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে।


এখন চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে আবির্ভাব ঘটেছে আরও নতুনদের। তাঁদের প্রধান পরিচয় জুলাই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় হিসেবে। এদের অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। কেউ কেউ এনসিপির নেতৃত্বে আছেন। এদের আবির্ভাব নতুন করে হয়েছে বলাটাও বোধ হয় সঠিক নয়। কেননা, চাঁদাবাজি তাঁরা করে এসেছেন প্রায় এক বছর ধরেই, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। উমামা ফাতেমাসহ কয়েকজনের প্রকাশ্য বক্তব্যে সে সম্পর্কে জানাও যায়। তবে তাঁদের চাঁদাবাজির ব্যাপকতার উদ্‌ঘাটন অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। ইতিমধ্যে দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সেই পুরোনো আমলেরই—যে ধরা পড়ে তার চাঁদাবাজির ব্যাপকতা সম্পর্কে জানা যায়। দলীয়ভাবে শাস্তিও হয়তো পায়। কিন্তু যাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন বা আছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কীভাবে? সংশ্লিষ্ট দলগুলো কি এমন একটি ঘোষণা দিতে পারে না যে, কেউ তাদের দলের নামে চাঁদা চাইলে যেন তাদেরকে জানানো হয়। অথবা পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এই সামান্য কাজটা কেন কোনো দল করছে না, তা বোঝা দায়।


এর পাশাপাশি মবোক্রেসি (প্রেশারোক্রেসিও বলা যেতে পারে) সংখ্যায় কিছুটা কম হলেও অব্যাহত আছে। অব্যাহত আছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনও। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অজুহাত ছিল আওয়ামী লীগের দোসর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া। এখন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতটাই হয়ে উঠেছে প্রধান। এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র বিস্ময়করভাবে নির্লিপ্ত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও