
কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইসময় সারা দেশে হামলার শিকার হয় পুলিশবাহিনী। থানা, ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের পতনের তিন দিন পর দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নবগঠিত সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢেলে সাজানো হয় পুলিশবাহিনীকে। পুলিশের মনোবল ও দক্ষতা বাড়াতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দেখতে দেখতেই এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। বরং মব ভায়োলেন্স, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুবৃত্তিসহ নানা অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এমনকি হামলার শিকার হচ্ছে পুলিশও। ১১ মাসে (২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) সারা দেশে নানা অপরাধের ঘটনায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৮টি মামলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে এক বছরে (২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন) দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২৯টি, কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। এ সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ সাংবাদিক। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত ৬ হাজার ৩৯০ জন এবং ধর্ষণের শিকার হন ৪৮৮ জন। গণপিটুনিতে মৃত্যু ১০৮ জনের, যৌন হয়রানির শিকার ২৮ এবং যৌতুক ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩৩ নারী। আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন-তিন মাসেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আটজন। এর মধ্যে ৫ জন পুলিশ, ১ জন র?্যাব, ১ জন কোস্ট গার্ড ও ১ জন যৌথ বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জন নির্যাতনে, ৫ জন গুলিতে এবং ১ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) ৪৪১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২২ জনকে। শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮৭টি। এছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১২৫টি। মব ভায়োলেন্সর মাধ্যমে হত্যার ঘটনা ঘটে ৮৯টি। সবচেয়ে বেশি মব ভায়োলেন্সে হত্যার ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে ৪৫টি। কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার মৃত্য হয় ৬৫ জনের। ১৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি