স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া দরকার

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৬

২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার একটি স্কুলের ওপর বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণরত অবস্থায় বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণ হারাতে হয়েছে আমাদের, যাদের বেশির ভাগই শিশু। গুরুতর আহত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই দুর্ঘটনা সারা দেশের মানুষকে স্তম্ভিত ও শোকে বিহ্বল করেছে। তবে এটি একই সঙ্গে ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা-পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য স্কুলগুলোর প্রস্তুতিমূলক অনুশীলনের ব্যাপারটি সামনে এনেছে।


প্রস্তুতিমূলক অনুশীলন বলতে বোঝায় প্রকৃত দুর্যোগ-দুর্ঘটনার আগেই করণীয় বিষয়গুলো ঠিক করে নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী মহড়া দেওয়া। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় নিরাপত্তা ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকেও যুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। এই মহড়ায় তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, তা শেখানো হয়।


যেমন অগ্নিদুর্ঘটনার সময় শিক্ষার্থীরা আগুন নেভানোর জন্য কী ব্যবস্থা নেবে, কীভাবে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে আসবে, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কোন নম্বরে যোগাযোগ করবে—এগুলোর প্রশিক্ষণ জরুরি। স্কুলের অনুশীলনমূলক মহড়ার সময় তারা সরাসরি ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব প্রতিটি ক্লাসরুমেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা। তা ছাড়া ওপরতলার শিক্ষার্থীরা জরুরি প্রয়োজনে কীভাবে নিরাপদে বের হয়ে আসবে, তার জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা।  


বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কথা আছে। এসব দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় কীভাবে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে, সে কথাও আছে। কিন্তু এগুলো হাতে–কলমে অনুশীলন করানো হয় না। ফলে, হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা আসলে দিগ্‌বিদিকশূন্য হয়েই দৌড়াতে থাকবে। নিয়মিত মহড়া ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগনো সম্ভব নয়, এটা সহজেই বোধগম্য।


মানতেই হবে, কিছু দুর্ঘটনা মানুষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। কিন্তু মানুষ সচেতন হলে অনেক দুর্ঘটনাই কমানো সম্ভব। যেমন স্কুলের সামনের রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং থাকলে শিক্ষার্থীরা অধিক নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। এমনকি বাস-গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দিলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমবে। এ ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের কাজ হবে রাস্তার নিয়ম-শৃঙ্খলা মানার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।



কিছু দুর্ঘটনা আবার নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। যেমন উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আগের ও পরের প্রস্তুতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দিতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলে অধিক বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার উপায় জানাতে হবে। বজ্রপ্রবণ এলাকায় ঝড়বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় শেখাতে হবে।


এ ছাড়া ভাঙনপ্রবণ নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোয় গাছ লাগানোর ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ করানো যায়। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে গাছ লাগানোর ব্যাপারেও শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। তবে শুধু গাছ লাগানো নয়, এসব গাছের যত্ন নেওয়াও তাদের শেখাতে হবে। গাছ, পাখি আর প্রাণীদের বিপন্ন করে মানুষের পক্ষে যে বাঁচা সম্ভব নয়, এটা সবাইকে বুঝতে হবে।


আগুন ও অ্যাসিডে ঝলসে গেলে কী করতে হবে, কাটাছেঁড়া ও হাড় ভাঙার প্রাথমিক চিকিৎসা কী হবে, সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে শেখাতে হবে। তা ছাড়া শ্বাসকষ্ট, মৃগীরোগ, চোখে আঘাত, পানিতে ডোবা, সাপে কাটা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞানটুকু কেবল পাঠ্যপুস্তকে থাকলে হবে না; দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে সরাসরি এগুলোর অনুশীলন করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্কুলগুলোয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফার্স্টএইড বাক্স থাকাও জরুরি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে রোগীকে নেওয়ার পদক্ষেপগুলোও জানানো দরকার।
 
দুর্ঘটনার কিছু মর্মান্তিক ও ভয়ংকর দৃশ্য শিশুদের চোখের সামনে চলে আসে। কখনো প্রত্যক্ষভাবে তারা সেগুলো দেখে, কখনো দেখে টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব দৃশ্য তাদের মন থেকে মুছে ফেলা সহজ নয়। এগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য শিশুদের ট্রমাচ্ছন্ন করে রাখতে পারে। সুতরাং কীভাবে মনের যত্ন নিতে হয়, সে শিক্ষাও জরুরি। এ জন্য স্কুলগুলোয় মনোবিদদের এনে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও