বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে করিডোর ইস্যুতে বিতর্কের রেশ না কাটতেই সামনে আসে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় স্থাপনের বিষয়টি।
এই সেদিন, ২৪ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থেই ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনে ছয় মাসের নোটিশে সরকার এই কার্যালয় প্রত্যাহার করতে পারবে।’ তবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলেও বললেন তিনি।
যদিও এ মাসের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে কি না, তিনি এটি বিচার করতে চান না। তাহলে ২০ দিন পরেই তিনি কেন বললেন যে এটি বাংলাদেশের স্বার্থেই হয়েছে–সেটি পরিষ্কার নয়।
এর আগে ৩ জুলাই পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, নেপাল থেকে জাতিসংঘের এ কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হলেও বাংলাদেশে কেন খোলা হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘নেপালে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছিল। এরপর তারা (কার্যালয়) চলে গেছে। আমাদের এখানেও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে সরকার যদি মনে করে, এ কার্যালয় কার্যকর হচ্ছে এবং আরও থাকা উচিত তাহলে কার্যালয় থাকবে, না হলে থাকবে না।’
এরই মধ্যে ১৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকারের সুরক্ষা ও বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি মিশন খোলার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস এবং বাংলাদেশ সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। মিশনটির লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান। যদিও কবে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, সেটি বিবৃতিতে উল্লেখ নেই।
এর আগের দিন সংবাদমাধ্যমেও খবরটি আসে। এমনকি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশিত হলেও সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। অর্থাৎ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণত এ ধরনের ঘটনার সংবাদে, বিশেষ করে কোনো দেশ বা পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন এই ব্যতিক্রম, সেটি প্রথম প্রশ্ন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিবৃতি পাঠানো হয় বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে। অথচ অন্য অনেক বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং নিয়মিত ব্রিফ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিবৃতি-বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো উচিত ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরেও এ বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, এই সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের পক্ষে ভলকার টুর্ক স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু কেন এই সমঝোতা? এখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কী আর ঢাকায় এই কার্যালয় না হলে বাংলাদেশের ক্ষতি কী?
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মিশনটির লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণের বাংলাদেশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তা করা।