‘ওর বাবার চোখের সামনেই বিমানটা ভাইঙ্গা পড়ছে। নিচতলায় তখন শুধু আগুন। দোতলায় ধোঁয়া। দরজা বন্ধ। আর্মির সাথে মিল্লা দোতলার পিছনের গ্রিল ভাইঙ্গা উনি মেয়েটারে বাইর করছেন।’ বলছিলেন রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আহমেদের মা শিউলি আক্তার।
গত সোমবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে সে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে তার।
সামিয়ার বাবা আব্দুর রহিম জানান, প্রতিদিনের মতো সেদিনও বেলা ১টায় মেয়েকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্লাসের শিক্ষক তাঁকে বলেন, সামিয়ার অতিরিক্ত ক্লাস আছে।
ছুটি হতে ২টা বাজবে। মেয়েকে একসঙ্গে নিয়ে ফেরার জন্য তাই বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। সে সময়ই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
স্কুলের হায়দার আলী ভবনের দোতলায় ছিল সামিয়ার ক্লাস। বিমান বিধ্বস্তের পরই সেখানে ছুটে যান বাবা আব্দুর রহিম। তখন সেখানে শুধু আগুন আর ধোঁয়া ৷ সঙ্গে আটকে পড়া শিশুদের চিৎকার ৷ দোতলার গেট বন্ধ থাকায় পেছনের গ্রিল ভাঙতে হয়, জানান আব্দুল রহিম। সেখানে তখন আরও প্রায় ৩০-৪০ শিশুকে দেখতে পান তিনি। সামিয়া ছাড়াও আরও তিন শিশুকে বের করে আনেন এই বাবা। ভয়াবহ সেই ঘটনার পর থেকে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান সামিয়ার মা শিউলি আক্তার।
সামিয়া বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে না সে। সামিয়ার মা বলেন, ‘ও কথা বলতে চায়, কিন্তু পারে না। মুখ ফুইলা গেছে। হাতের চামড়া পোড়া।’
শিউলি আক্তার জানান, আইসিইউর ভেতরে চারদিকে ব্যান্ডেজে মোড়া দগ্ধ শিশু আর নিস্তব্ধতা। এমন পরিবেশে ভয় পাচ্ছে সামিয়া। হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছে না সে। অস্ফুট স্বরে সে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে চায়।
সামিয়ার ক্লাসের বন্ধুরাও হতাহত হয়েছে বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মা শিউলি। তিনি বলেন, ‘কত মায়ের বুক খালি হইল। আগুনে পুইড়া কত কষ্ট পাইল বাচ্চাগুলা।’ সেই দিনের পর থেকে একটাই প্রার্থনা তাঁর, হাসপাতালে থাকা সব শিশু সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরুক।