প্রথম আলোর সেই ‘লাইলী’ নোয়াখালী থেকে যেভাবে ফ্রান্সে গেলেন—প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল অভিনেত্রী রেহানা রাখির নোয়াখালী থেকে ফ্রান্সে যাত্রার গল্প। তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু, অভিনয় ও দেশ ছেড়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে জনপ্রিয়তা উঠে আসে সেই গল্পে।
২০১৬ সালে কাজের পরিমাণ কমতে থাকে রাখির। তবু টিকে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যখন আর টিকতে পারছিলেন না, ২০১৮ সালে তিনি পাড়ি জমান ফ্রান্সে। ভেবেছিলেন, ইউরোপের উন্নত দেশে গেলে টিকে থাকার লড়াইটা কিছুটা সহজ হবে; কিন্তু হলো উল্টো। বেশ কয়েকবার দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেন রাখি। সিদ্ধান্ত নেন ফ্রান্সে আর থাকবেন না।
কথায় আছে না ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। এত সংগ্রামের মধ্যেও অভিনয়ের নেশা মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে রাখির। ২০১৯ সালে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তিনি। বিভিন্ন টপিকে অভিনয় ও জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট বানাতে শুরু করেন। ‘রেহানা রাখি ভ্লগ’ নামের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে আস্তে আস্তে সাবস্ক্রাইবার বাড়তে থাকে। অভিনয়, ভিডিও তৈরি, এডিটিং—সব একাই করতে হয় তাঁকে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে একেকটা কনটেন্ট বানিয়েছেন তিনি।
রাখির ভাষ্য, ‘অনেক ক্লান্ত থাকার পর এমনও হয়েছে, এক দিনে তিনটি ভিডিও তৈরি করতে হয়েছে। আবার টানা কয়েক রাত না ঘুমিয়েও ভিডিও শুট করেছি।’
রাখি বলেন, ‘আমি কোথাও গেলে অনেকে আমাকে দেখে হাসতে থাকতেন। টিপ্পনী দিয়ে বলতেন, “আরে ওই রাখি যাচ্ছে।”
বিশ্বাস করবেন না, এ শহরের মানুষ যে কী পরিমাণ অপমান করেছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। এমনও হয়েছে, কারও বাসায় দাওয়াতে গিয়েছি, তাঁদের মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে যে আমি তাঁদের ভিডিওর মধ্যে দেখিয়ে অনেক অনেক টাকা ইনকাম করি। যেই আমি ক্যামেরাটা ধরতাম, ঠাস করে মুখটা লুকিয়ে ফেলতেন।’
তিনি বলেন, ‘যখন ইউটিউবিং শুরু করি, তখন চিন্তা করলাম, সবাই তো বইয়ের ভাষায় কথা বলে, আমি না হয় আমার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি। এ চিন্তা থেকে নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলা শুরু করি। অনেকে আমাকে নোয়াখাইল্লা নোয়াখাইল্লা বলে বিদ্রূপ করেছেন; কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার একটুও খারাপ লাগেনি। কারণ, আমি আমার আঞ্চলিকতাকে ভালোবাসি। এটাই আমার অস্তিত্ব, এটাই পরিচয়।’
রাখির কথায়, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশন আমাকে নতুন করে পরিচিতি দিয়েছে। নাটকে অভিনয় করে যে পরিচিতি পাইনি, ইউটিউব, ফেসবুক করে আল্লাহ আমাকে অনেক অনেক বেশি পরিচিতি দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী ভাই-বোনের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী, তাঁদের এত সুন্দর সাপোর্টের কারণে আজ আমি রেহানা রাখি।’