You have reached your daily news limit

Please log in to continue


এনসিপির ‘লংমার্চ টু গোপালগঞ্জে’ হামলার নেপথ্যে

গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ ও নবগঠিত এনসিপির রাজনীতিকে গুছিয়ে আনার লক্ষ্যে এনসিপির নেতারা ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ বা সংক্ষেপে ‘জুলাই পদযাত্রা’ নামে একটি গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শ্রেষ্ঠতম বীর শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর থেকে যাত্রা শুরু করে এ পদযাত্রা ইতোমধ্যে দেশের বেশ কটি জেলা অতিক্রম করেছে। দেশবাপী গণসংযোগের অংশ হিসাবে এনসিপি গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলাতে ‘লংমার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নামক এক কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী গোপালগঞ্জে উপস্থিত হয়ে পূর্বনির্ধারিত সভার কাজ শুরু করে। কিন্তু পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পিতৃভূমির লোকজন এ সমাবেশকে ঘিরে গোলযোগের আশঙ্কা করার কারণে সেখানকার সভায় তেমন জনসমাগম হয়নি। তারপরও উপস্থিত লোকজনদের নিয়েই সভার কাজ দ্রুত শেষ করে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করার সময় তাদের গাড়িবহরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্র-যুবলীগের কর্মীরা অকস্মাৎ হামলা চালায়। এ হামলার প্রকৃতি ও ব্যাপকতা এত ভয়ংকর ছিল যে, সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৪ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। পরে সেনাবাহিনী তাদের দুটি ‘আর্মরেড পার্সোনেল ক্যারিয়ারে’ করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের গোপালগঞ্জ থেকে খুলনায় পৌঁছে দেয়।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তো বটেই, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতেও ভালোভাবে গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ করার পর গোপালগঞ্জে কী এমন ঘটল যে, সেখানে এনসিপি নেতাদের এরকম কঠিন বাধার মুখে পড়তে হলো? তাদের সভাকে পণ্ড করা এবং আক্রমণ করার জন্য চারজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আত্মবিসর্জন দিল? বিষয়টিকে বোঝার/বিশ্লেষণের জন্য কিছুটা পেছনে ফিরতে হবে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ তাদের জেলায় জন্ম নেওয়া বিশিষ্ট মানুষের জন্য গর্ব অনুভব করে। এ গর্বের বিষয়টি শুধু মৌখিক কথাতে সীমাবদ্ধ না, তারা এ বিশিষ্ট মানুষদের ‘আইডল’ মনে করে; তারা মনে করে, এ মানুষের কল্যাণে তারা দেশে বিশিষ্ট মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। এ বিশিষ্ট মানুষের রাজনীতি, চিন্তা-চেতনা তাদের মোহিত করে। এখানে সবসময় যুক্তি খাটে না। তারা প্রায়শই তাদের বিষয়ে অন্ধের মতো আচরণ করেন। গোপালগঞ্জের সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান তেমনই একজন মানুষ। শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ অন্তত-দুবার স্বৈরতন্ত্রের পথে হেঁটেছে; কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের প্রতি গোপালগঞ্জবাসীর মোহভঙ্গ হয়নি। শেখ মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তার মুখড়া স্বভাবের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হলেও গোপালগঞ্জবাসী তাকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কার্পণ্য করেনি। তাদের ভোটের কল্যাণেই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। একই কথা প্রযোজ্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কিংবা দেশনেত্রী বেগম জিয়ার ক্ষেত্রেও। বগুড়া বা ফেনীর মাটি বিএনপির দুর্জয় ঘাঁটি হয়েছে এদের জন্মভূমি হওয়ার কারণে। অবশ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব, মার্জিত ব্যবহার ও মৃদু ভাষণ তাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে, দেশের সব আসনই তার জন্য প্রায় অবারিত দ্বার হয়ে গিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র ৩ মাস পরে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন ভূমিপুত্র হওয়ার কারণে। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের সময়েও খুলনা থেকে খান এ সবুর সহজ জয় পেয়েছিলেন এলাকার সন্তান হওয়ার কারণে এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান ও বিপদে-আপদে এলাকার জনগণের পাশে থাকার কারণে।

২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিপীড়ন এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যার কারণে সারা দেশে তিনি ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য হলেও তাতে গোপালগঞ্জবাসীর মোহভঙ্গ হয়নি। এর অবশ্য দ্বিবিধ কারণ রয়েছে। প্রথমত, তিনি ভূমিকন্যা। দ্বিতীয়ত, তিনি সারা দেশের মানুষকে ঘৃণা করলেও গোপালগঞ্জবাসীকে পছন্দ করতেন। সে কারণে তিনি ক্যাডার সার্ভিস তো বটেই, দেশের সব ধরনের পদে চাকরির জন্য তখন প্রচলিত ‘জেলা কোটার’ প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে গোপালগঞ্জবাসীর চাকরি ও পদায়ন/পদোন্নতি নিশ্চিত করেছেন। গোপালগঞ্জে প্রার্থী না পাওয়া গেলে বৃহত্তর ফরিদপুর তার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকত। তার আমলে দেশের সব সরকারি (নন ক্যাডার), আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রায় একচেটিয়াভাবে গোপালগঞ্জের লোকজন চাকরি পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাকরিপ্রাপ্তির এ হার ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিল (আনসার বাহিনীতে)। শুধু এটাই নয়, তিনি কোনো ধরনের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে পনেরো বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গোপালগঞ্জ জেলার জন্য উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দ ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় স্থানে ধরে রেখেছেন। মাত্র ১৪৬৮.৭৪ স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলার (জনসংখা ১২ লাখের মতো) জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা ‘প্রতি স্কয়ার কিলোমিটার’ হিসাবে অনেক বড় ব্যবধানে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে। বস্তুত গত পনেরো বছরে গোপালগঞ্জ জেলায় উন্নয়ন খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আগামী পনেরো বছরে আর যদি এক টাকাও এ জেলায় বরাদ্দ দেওয়া না হয়, তবুও ৩০ বছরের বার্ষিক গড় বরাদ্দ সমআয়তনে অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকায় যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের মাটিতেও ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য সেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। ফলে গোপালগঞ্জবাসী যেমন দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে চাকরি-বাকরিসহ ঠিকাদারি ব্যবসায়ে এগিয়ে আছে, তেমনি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত। এসব কারণে দেশের অন্যান্য জেলার মানুষের কাছে শেখ হাসিনা যতই বৈষম্য সৃষ্টিকারী ও নিপীড়ক হিসাবে পরিচিত থাকুন না কেন, গোপালগঞ্জবাসীর কাছে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। এসব কারণে গোপালগঞ্জ জেলায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

এনসিপি যখন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখন তারা বেশ কয়েকটি ভুল করে বসে। প্রথমত, তারা অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে কর্মসূচির নাম রেখেছিলেন ‘জুলাই পদযাত্রা’, কিন্তু গোপালগঞ্জের ক্ষেত্রে নামটিকে পরিবর্তন করে রাখেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’, যা গোপালগঞ্জবাসীর মনে আশঙ্কা ও সন্দেহের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, গোপালগঞ্জে যাওয়ার আগে তারা ঘোষণা করলেন, তারা গোপালগঞ্জে ‘মুজিববাদের’ কবর রচনা করবেন এবং স্লোগান দিলেন ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’। বস্তুত ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুরের মৃত্যু এবং দাফনের সঙ্গে মুজিববাদেরও মৃত্যু ও দাফন সম্পন্ন হয়েছিল। এনসিপির নেতাকর্মীদের মুখে অপ্রাসঙ্গিক ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান শুনে গোপালগঞ্জবাসীর ধারণা হয়েছিল, এ কর্মসূচি হয়তো শেখ মুজিবের কবর ভাঙচুর করার লক্ষ্যেই করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ির ক্ষেত্রে। তৃতীয়ত, তারা গোপালগঞ্জে কর্মসূচি দেওয়া বা বাস্তবায়নের আগে গোপালগঞ্জবাসীর আস্থায় নিতে সক্ষম হননি। গোপালগঞ্জে তাদের রাজনীতির সমর্থকের সংখ্যা হাতেগোনা, যা স্বৈরাচারের বিশালসংখ্যক সমর্থকদের সামনে দাঁড়ানোর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। তারা গোপালগঞ্জের মানুষের বিরোধীপক্ষ বা ‘এলিয়েন’ হিসাবে বিবেচনা করেই এ কর্মসূচি প্রণয়ন করেছেন। চতুর্থত, তারা শেখ হাসিনার প্রতিশোধপরায়ণতা, ক্রোধ, আক্রোশ বা হিংস্রতাকে আমলে নেননি। এসব ভুলের কারণে দেখা যাচ্ছে, গোপালগঞ্জের মানুষের মনে সাধারণভাবে ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল, এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জের বাইরের মানুষ হিসাবে শত্রুপক্ষের এলাকায় প্রতিশোধ বা আক্রমণ করার জন্য গিয়েছেন এবং স্বাভাবিক কারণেই গোপালগঞ্জবাসী তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন