নির্বাচন কমিশনকে সফল হতেই হবে

যুগান্তর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৯

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এ বিষয়ে আরও বেশি আশাবাদী ও সক্রিয় হয়ে উঠছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ না থাকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি, এ তিনটি দলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।


আসন্ন নির্বাচনে ছাত্রসমাজের এনসিপি কতদূর কী করতে পারবে, সেটি আগাম বলা মুশকিল। দেশের তরুণ সমাজকে নিয়ে নবগঠিত দলটি একটি চমক সৃষ্টি করতে পারবে, এমন ধারণা কারও কারও মনে বদ্ধমূল হলেও আমি বলব, নির্বাচনি অঙ্ক অনেক জটিল, অনেক কঠিন। তাছাড়া নির্বাচনি মাঠও অনেক পিচ্ছিল, অনেক ঝানু খেলোয়াড়ও সে মাঠে খেলতে গিয়ে আছাড় খেয়ে ঘরে ফেরে! সুতরাং নতুন একটি দল গঠন করে সফলতা পাওয়ার কাজটি সহজ হবে না। তবে দেশের মানুষ একটি পরিবর্তন চায়। আর সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চরিত্রে বাস্তব পরিবর্তন না আনতে পারলে জনগণ তাদের বয়কট করতে পারে এবং এনসিপি ও দু-একটি ছোট দল এর সুবিধা পেতে পারে।


বিগত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশে রাজনৈতিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতির প্রতি মানুষের মনে বিতৃষ্ণা জন্মেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক পরিবার সবকিছু হারিয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অতীত ব্যর্থতা, তাদের অযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ও শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে যে একটি দানবীয় সরকারে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল; সে কথাটিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আর সেসব কারণে সব রাজনৈতিক দলেরই এখন আত্মশুদ্ধির দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত। পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর পর গত এক বছরে তারা নিজেদের আচার-আচরণে কতটুকু পরিবর্তন এনেছেন, আত্মসমালোচনা করেছেন, আত্মোন্নয়ন, আত্মত্যাগ করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সে বিষয়েও মনোযোগী হওয়া উচিত। অন্যথায় তাদের অবস্থাও যে লাউ, সেই কদুর মতোই হলে দেশের আমজনতা তাদেরকেও আস্থায় নেবেন না। এক্ষেত্রে এ প্রশ্নটি করাই যায় যে, গত এক বছরে দেশে যেসব অনাচার, অশান্তি, চাঁদাবাজি, হামলা-মামলা, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্ম ঘটে গেল, সেসবের দায় কারা বহন করবেন? আর কেন, কারাইবা এসব করার সাহস পেলেন? এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারাও যদি রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে দেশের মানুষই বা যাবেন কোথায়? তাই বলছিলাম, আসন্ন নির্বাচনে জনগণের কাছে যাওয়ার আগে নিজেদের চেহারাটাও একবার আয়নায় ভালোভাবে দেখে নিলে তারাই উপকৃত হবেন।



এবার নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যা বলতে চাই তা হলো, এদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো কাজটি কিন্তু সহজ নয়। আর বর্তমান অবস্থায় এ কাজটি আরও কঠিন। কারণ, দেশে এখনো আইনের শাসনের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী এখনো সর্বাংশে সক্রিয় নয়; তাদের চোখের সামনেই অনেক অপকর্ম, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে, অথচ তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এ অবস্থায় ভোটকেন্দ্রে তাদের ভূমিকা কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ ভোটকেন্দ্রে তাদের যথাযথ ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না। ৪৫ ও ৪৮ বছর আগে আমাকে দু’দফা প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল বলে আমি সম্যকভাবে বুঝতে পারি, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে কী ঘটে। একবার ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খল অবস্থার মাঝে বের হয়ে দেখি, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বারান্দায় চেয়ারে বসে আরামে সিগারেট ফুঁকে চলেছেন। তাকে ধমক দিয়ে ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে বলি। তিনি ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তাছাড়া সেবারে আমার আরও একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বর্তমান উত্তরার বাইলজুরি এলাকার গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভোটের বাক্স এবং ফলাফল সদরঘাট ডিসি অফিসে জমা করতে গেলে ভোটের রেজাল্ট শিট দেখে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ফ্রেশ শিট দিয়ে তার কথামতো ভোটের রেজাল্ট পালটিয়ে সেখানে স্বাক্ষর করে দিতে বলেন। তখন একপ্রকার গর্জে উঠে আমি বলেছিলাম, ‘No, I will not do that, If you don’t receive the original sheet, I will leave the place and I don’t know what will happen then’. আমার সে কথাটি বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হওয়ায় আশপাশ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ এগিয়ে এসে বিষয়টি জেনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে অরিজিনাল রেজাল্ট শিট গ্রহণ করতে বলায় আমি সেদিন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। আমার অভিজ্ঞতার কথাগুলো এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো, আসন্ন নির্বাচনে যারা প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার হবেন, তাদের সাহসী ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।


সেই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই, অনেক তো হলো, এবার একটু ঘুরে দাঁড়ান, আপনাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নির্বাচনি ময়দান থেকে ফায়দা লুটে যারা দেশের সম্পদ লুটপাটে মেতে ওঠে, এখনই তাদের রুখে দাঁড়ানোর সময়। ভবিষ্যতে আর কোনো ভোটডাকাত, ভোটচোর, ভোটশিকারি যাতে দেশের সাধারণ মানুষের ভোট হরণ করতে না পারে, সে দায়িত্ব আপনাদেরই বহন করতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও