
জুলাইকে ‘তিউনিসিয়া উপসর্গ’ থেকে কি রক্ষা করা যাবে
এক বছর পার হয়ে গেল জুলাই অভ্যুত্থানের। ঠিক এক বছর আগে জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল দেশের মানুষ।
ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করা শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব ঐক্যের কারণেই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হন।
কিন্তু অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে বিভাজন ও বিভক্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে বিভাজন লক্ষ করা যায়।
যদি সেই রাজনৈতিক পরিবর্তনে বহুপক্ষের অংশগ্রহণ থাকে, তবে এই বিভাজন ক্রমে প্রকট হয়ে ওঠে। আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে একক কোনো শক্তির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ছিল না।
ছাত্ররা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। পেছনে থেকে তারাই হাসিনাবিরোধী আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে।
সাধারণ মানুষও তাদের সর্বশক্তি নিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থান গত ১৭ বছরের নিরন্তর লড়াই-সংগ্রামের ফসল।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা নতুন দল করেছে। কিন্তু দলটি নানা ইস্যুতে বিতর্কের জড়িয়ে পড়েছে, নেতাদের কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারও ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না।
গত এক বছরের দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। সংস্কারের নামে কথা হয়েছে বিস্তর। সরকার ও সরকার-সমর্থক দলগুলোর পক্ষ থেকে সংস্কার অনেকটা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তাদের সঙ্গে শতভাগ একমত না হলেই সংস্কারবিরোধী বলে প্রচারণা করা হচ্ছে। বরং সংস্কারের নামে কিছু অলীক ও অবাস্তব ধারণা সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ সরকারকে দুর্বল করে দেবে।
অভ্যুত্থানের ঠিক এক বছর পর এসে অনেকেরই মনে হচ্ছে দেশকে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা একটি অংশ এই কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করছে। নানা ইস্যু সৃষ্টি করে দেশের ভেতরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে এই গোষ্ঠী।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তিউনিসিয়ার মিল পাওয়া যাচ্ছে। এই মিলটি শঙ্কার ও ভয়ের। তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লবের কথা নিশ্চয়ই আমরা এখনো ভুলে যাইনি। ২০১০-১১ সালে ২৮ দিনের আন্দোলনে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলী ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার মতোই।
তিউনিসিয়া থেকেই আরব বসন্তের শুরু। সেখানে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বোয়াজিজি নামেন এক তরুণ রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে আত্মহননের মধ্য দিয়ে। এক বোয়াজিজির মৃত্যু গোটা তিউনিসিয়াকে জাগিয়ে তুলেছিল।
ঠিক আবু সাঈদের মৃত্যু যেমন আমাদের তাতিয়ে দিয়েছিল। এরপরই রাজপথ জনসাধারণের দখলে চলে আসে। ক্ষোভের আগুনে পুড়ে যায় শেখ হাসিনার অবৈধ শাসনের প্রাসাদ।
এখানে দেখা যাচ্ছে বিপ্লবের শুরুর ঘটনার সঙ্গে তিউনিসিয়া ও আমাদের যথেষ্ট মিল রয়েছে। পরবর্তী ঘটনাবলিতেও মিল রয়েছে।
তিউনিসিয়ায় ওই সময় সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত দল ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখা সংগঠন এন্নাহাদা। এই দলটিই মূলত পেছন থেকে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু সামনে ছিল সাধারণ মানুষ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সরকার পতন
- ফ্যাসিবাদী
- গণঅভ্যুত্থান