ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ: শঙ্কিত অভিবাসীরা

যুগান্তর আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:১৩

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্পা সিটিতে মুনিয়া পারভিন ওরফে জারিন হক (৪৬) নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারীর ছয় মাস কারাদণ্ডের পর তার আমেরিকান নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মিথ্যা দলিলের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করা হয়েছিল।


মুনিয়া পারভিন ১৯৯৩ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন; কারণ তিনি ভীত ছিলেন যে বাংলাদেশে তার নিপীড়িত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। দেশে ফিরে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এমনকি তার জীবনও বিপন্ন হতে পারে। অতএব জীবনের নিরাপত্তার আশায় তিনি জন্মভূমি ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তার আবেদন নাকচ করা হয়, কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় লাভের সমর্থনে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অতএব, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তার বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করার জন্য ইমিগ্রেশন আদালতে প্রেরণ করে। আদালতও তার যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করেননি। ১৯৯৭ সালে ইমিগ্রেশন আদালত তার ওপর ডিপোর্টেশন আদেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার তারিখ বেঁধে দেন। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় তাকে ডিপোর্ট করার জন্য।


তার বিষয়টি যখন আদালতে বিবেচনাধীন ছিল, তখন তিনি তার পরিচয় গোপন করে জারিন হক নামে এবং ভিন্ন পরিচয়ে নতুন একটি আবেদন করেছিলেন, যেটি অনুমোদিত হয় এবং তিনি গ্রিন কার্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করেন এবং ওই বছরই তিনি ন্যাচারালাইজড আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভ করেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি তার আগের আবেদনের সব তথ্য এড়িয়ে যান এবং প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তার ওপর ডিপোর্টেশনের আদেশসহ সবকিছু অস্বীকার করেন। কিন্তু নাগরিকত্ব লাভের পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অধিকতর তদন্তে তার ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই করে নিশ্চিত হয় যে ডিপোর্টেশন আদেশপ্রাপ্ত মুনিয়া পারভিন ও জারিন হক একই ব্যক্তি এবং তিনি তার নাগরিকত্বের আবেদনের বেশকিছু অংশে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।



যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাচারালাইজড নাগরিক হওয়ার জন্য ২০ পৃষ্ঠার ‘এন-৪০০’ ফরম পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে প্রায় ২০টি রুটিন প্রশ্ন থাকে, যার উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন: ‘আপনি কখনো কোনো কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন কি না?’ ‘কখনো কোনো কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না?’ ‘বলপ্রয়োগ বা সহিংস উপায়ে বা অসাংবিধানিক সরকার উৎখাতে লিপ্ত ছিলেন কি না?’ ‘কারও জানমালের ক্ষতির উদ্দেশ্যে কখনো কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন কি না?’ এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অনেকে উতরে যেতে পারেন। কিন্তু নাগরিক হওয়ার পর তাদের তথ্য যাচাই করার প্রয়োজন হলে যদি প্রমাণিত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তাহলে তার আমেরিকান নাগরিকত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। পারভিনের ক্ষেত্রে ডিপোর্টেশন আদেশ অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অপরাধ ছাড়াও নাগরিকত্ব লাভের জন্য ভুয়া নাম ও পরিচয়ে নতুন করে আবেদন করার মধ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে নাগরিকত্ব লাভ ছিল শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ।


পারভিন মুনিয়া ওরফে জারিন হকের নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা এ ধরনের একমাত্র ঘটনা নয়। ডিপোর্টেশন আদেশ লাভ করেও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাননি, এমন অনেক বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং তাদের খুঁজে বের করা; যারা ন্যাচারালাইজড সিটিজেন হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন এবং যারা ইতোমধ্যে আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, এমন হাজার হাজার আবেদনকারী ও নাগরিকত্ব লাভকারী বিদেশির নথিপত্র আবারও যাচাই-বাছাই করে যদি তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করে থাকেন, তাদের ডিপোর্ট করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের সহযোগিতায় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস ইতোমধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে।


শপথ গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও ডিপোর্ট করার ব্যাপারে যে আদেশ জারি করেছেন, তা বাস্তবায়নে ‘আইস’ জোর তৎপরতা শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেড় লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। কেবল এর মধ্যে ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া সীমিত না রেখে ট্রাম্প তার নতুন নির্দেশনায় ডিপোর্টেশনের আওতা সম্প্রসারিত করে যারা বিভিন্নভাবে অর্জন করা বৈধ স্ট্যাটাসে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন; অর্থাৎ যারা গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভের জন্য দিন গুনছেন এবং যারা নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, তাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়ায় যেসব আবেদনকারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত ছিলেন অথবা অপরাধে সহায়ক থাকার তথ্য গোপন করে আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদনে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও তথ্য গোপন করা ইমিগ্রেশন আইনের পরিপন্থি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারি আইনেও তারা গুরুতর অপরাধী। অতএব, এর একমাত্র শাস্তি ন্যাচারালাইজড নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল বা আবেদনকারীর আবেদন বাতিল করে উভয় ক্ষেত্রে ডিপোর্টেশন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও