
মুরাদনগরের ঘটনা এবং আবার ভিকটিম ব্লেইমিং
মুরাদনগরের সেই ভিডিওটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ভিকটিম ব্লেইমিং। কিছু মানুষ ও মিডিয়া অলরেডি নেমে গেছে ‘প্রবাসীর স্ত্রী’র পরকীয়ার সন্ধানে। তারা এটাই বলতে চাইছে, যেহেতু এটা পরকীয়ার ঘটনা, তাই এই নারীর অপদস্থ হওয়াটা স্বাভাবিক, তাকে ধর্ষণ করা ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াটাও স্বাভাবিক।
চোখের সামনে এক নারীর চরম অসম্মান হচ্ছে, আর চারপাশে মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে সেই বীভৎসতা দেখার জন্য। কেউ ভিডিও করছে, কেউ চিৎকার করছে কিন্তু নারীকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছে না। ওখানে যে পুরুষরা দাঁড়িয়ে এই বীভৎসতা উপভোগ করছিল, তারা সবাই একধরনের ধর্ষক ও পারভার্ট। যারা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছে, তারাও তাই। এরা নারীকে নারী হিসেবে না দেখে, দেখেছেন শরীর হিসেবে।
অনলাইন পোর্টাল ‘স্ট্রিম’র এক তথ্যে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ভিডিও করা হয় জোরপূর্বক ও সম্মতিহীনভাবে, যা একটি অপরাধমূলক কার্যকলাপের দলিল। তাই এটি দমন করার জন্য অন্যধরনের আইনি হস্তক্ষেপ দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের ভিডিও প্রচারের দায়ে বিচারের নজির কম। অনলাইনে বাড়ছে হয়রানির কন্টেন্ট।
গত কয়েক বছরে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ২২টি ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে, কিন্তু ভিডিও ছড়ানোকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা খুব কমই নেওয়া হয়েছে। আইনজীবী মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের মতে, এসব অপরাধের বিচার হয় মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে, যেখানে ভিডিও ছড়ানোর অপরাধ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়।
এদিকে ধর্ষণ বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠছে। এর চাইতেও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ধর্ষণকে জায়েজ করার জন্য ভিকটিমকে দায়ী করার প্রবণতা বাড়ছে। ভিকটিমকে দায়ী করতে পারলে ধর্ষকের অপরাধ কমে আসে। মেয়েটি একা বের হলো কেন, নারী রাতে বের হবে কেন, কেন শার্ট-প্যান্ট পরে ঘুরবে? কেন লঞ্চে বসে আনন্দ করবে? ভিকটিম যে বয়সেরই হোক না কেন, তার ওপর দায় চাপাতে একবারও ভাবে না মানুষ। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ট্রমা, ক্ষতি, লজ্জা ইত্যাদি নিয়ে না ভেবে, কীভাবে এ খবরটা বাজারজাত করা যায়, সেটা ভাবে।
একজন নারীকে যখন নিপীড়ন করা হয়, তখন সে বিচার চাইতে গেলে, তাকে আবার চেপে ধরা হয়। তার প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, সবকিছুর জন্য তাকে আবার দোষারোপ করা হয়। বিচারের নামে আরও বেশি নিপীড়ন করা হয়। নানান বিতর্ক শেষে, আবার নারীর চরিত্র নিয়েই কথা হয়, আর বাকিরা সবাই পার পেয়ে যায়! মুরাদনগরের ঘটনাটি এর প্রমাণ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরপরও সামাজিকভাবে তাকে হেয় করা হচ্ছে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ মেয়েটি এখন মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলছে। এমনকি কাউকে দোষও দিতে চাইছে না। ভুক্তভোগী নারী বলেছেন, ‘ফজর আলীকে আসামি করে করা মামলা তিনি তুলে ফেলবেন। তাকে এই মামলা তোলার জন্য কেউ কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করেননি। তিনি ফজর আলীর বিচার চান না, তিনি চান দেশে শান্তি থাকুক’। মামলা কেন তুলতে চাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জাবলেন, ‘তার স্বামী বলছেন মানসম্মান যা যাওয়ার তা গেছে। মামলা করলে তো তা আর পাওয়া যাবে না। তাই নিজ ইচ্ছায় তিনি মামলা তুলে ফেলবেন।’
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভিডিও আপলোড
- ধর্ষণ