ছোটবেলায় শুনতাম অমুকের মতো হও, তমুকের মতো হতে নেই। কলেজে পা ফেলে দেখি কেউ মহানায়ক উত্তম কুমারের মতো চুল ছাঁটে, কেউ নায়িকা মধুবালা কিংবা নার্গিসের মতো করে হাসতে গিয়ে হাসির খোরাক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে দেখি পিকিং, মস্কো,ওয়াশিংটন পন্থিদের প্রচণ্ড পদচারণ; বাঙালি পন্থিও ছিল পাশাপাশি। পেশা জীবনে পেলাম বাংলাদেশের প্রতি পরামর্শ– দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মতো হও। এর কথা ওর কথা শুনতে শুনতে নীতিনির্ধারকদের অবস্থা মান্নাদের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের মতো, ‘আমি কোন পথে যে চলি, কোন কথা যে বলি/ তোমায় সামনে পেয়েও খুঁজে বেড়াই মনের চোরা গলি/ সেই গলিতেই ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে দেখি, বন্ধু সেজে বিপদ আমার দাঁড়িয়ে আছে একি…।’
বিপদ আছে বৈকি। অন্তত সরকারি পরিকল্পনায় এবং ধীমানদের ধ্যানধারণায় এমনি ইঙ্গিত মেলে যে আগামী এক দশকের মধ্যে উঁচু–মধ্য আয়ের দেশ, এবং দুই দশকের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হবার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ সামনে এগুচ্ছে যদিও করোনা আর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আপাতত পথ আগলে রাখছে। সন্দেহ নেই যে আমাদের লক্ষ্যগুলি প্রেরণাদায়ক, তবে উদ্দীপ্ত উদ্দেশ্যে পৌঁছুতে নির্দিষ্ট পথ পরিষ্কারভাবে জানান দেয়ার দরকার। এই ক্রান্তিকালের করণীয় হিসেবে আরও দরকার অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং বাংলাদেশের নিজস্ব ‘মডেলে’র উপর ভর করে সামনের সমস্যাসংকুল পথ পাড়ি দেয়া।
অর্থনীতির প্রখ্যাত প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা) অন্তত এমনটিই মনে করেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের আগামী স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশ–ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তাঁর ক্ষুরধার যুক্তি সাধারণ মনেও চিন্তার খোরাক জোগায় বলে এর উপস্থাপনা খুবই জরুরি।