
ডিপফেকের ক্ষতি থেকে মুক্তির উপায়
ডিপফেক (Deepfake) একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ্লিকেশন, যা কৃত্রিম মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। এটি ডিপফেক অ্যাপ্লিকেশন একটি নতুন ধারণা, যা ডিজিটাল ব্যবসার জগতে ব্যবহারযোগ্য হলেও সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ডিপফেক কনটেন্টগুলো সাধারণত ছবি, ভিডিও অথবা অডিও এবং তাদের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে পারে। আরও ভালোভাবে বলা যায়, ডিপফেক বাস্তব বা অস্তিত্বহীন বস্তুভিত্তিক কনটেন্ট চিত্রিত করতে পারে, যার মধ্যে মানুষের ছবি বা ছবির মতো কিছু থাকতে পারে, যা কিনা কোনো কিছুর অর্থপূর্ণ ব্যবহার বা ধারণকে বোঝায়। এখানে বলে রাখা ভালো, ডিপফেক শব্দটি প্রথম ২০১৭ সালের শেষের দিকে একজন রেডিট ব্যবহারকারীর মাধ্যমে অনলাইন জগতে প্রবর্তিত হয়েছিল।
ডিপফেকের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি চিত্র বা ভিডিওতে কোনো ব্যক্তির সাদৃশ্য অন্য ব্যক্তির সঙ্গে অদলবদল করানো। এ ধারণাটি একেবারেই এ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত।
এখন দেখা যাক ডিপফেক প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে। প্রথমে, এতে এআই বা বৃহৎ ভাষা মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ করার কাজটি সম্পন্ন হয়। এখানে যে এআই কৌশলগুলো ব্যবহার করি, তাকে ডিপ লার্নিং মডেল বলা হয়। এ মডেলটি সাধারণত একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যার লক্ষ্য হলো হাজার হাজার মানব বস্তুর ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হওয়া। এটি এআইকে মানুষের মুখের নড়াচড়া, অভিব্যক্তি এবং ভয়েস প্যাটার্ন শিখতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় কার্যকলাপটি মানুষের চেহারার পরিবর্তন বা ফেস সোয়াপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ কার্যকলাপটি এআই মডেলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। এআই মডেলটি একটি ভিডিও বা ছবিতে মানুষের মুখের বদলে অন্য একটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এআই মডেলটি মানুষের মুখের বৈশিষ্ট্য, ত্বকের রং, টোন এবং আলোর সঙ্গে সাবধানে মেলানোর জন্য কাজ করে, যাতে মুখ অদলবদলের ঘটনাটি নির্বিঘ্ন এবং পরিচ্ছন্ন হয়, যা থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব, কোন মুখের কোন অভিব্যক্তি প্রকাশিত হচ্ছে। এরপর, এআইয়ের জন্য মুখের নড়াচড়া বা মুভমেন্ট করা হয়, যাতে নকল মুখ স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে, অভিব্যক্তি ও মাথার নড়াচড়া এবং এমনকি সূক্ষ্ম পেশির টান মূল ভিডিওর সঙ্গে গতির সমন্বয় করা হয়ে থাকে।
এরপর ডিপফেকের পদ্ধতির মধ্যে ভয়েস সংশ্লেষণ কার্যকলাপ পরিচালিত হয়, যেখানে জাল ভিডিও বা চিত্র তৈরি করতে সংশ্লেষিত বা পরিবর্তিত ভয়েস অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সম্পর্কিত ব্যক্তির বা মানুষের স্বর এবং কথা বলার ধরন অনুকরণ করা। পরিশেষে, যে কোনো বিকৃতি সংশোধন এবং দর্শকদের কাছে ডিপফেক কনটেন্টটিকে বিশ্বাসযোগ্য, খাঁটি এবং নির্ভরযোগ্য দেখাতে যা যা করা দরকার, তাই করে থাকে।
ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কনটেন্ট বিনোদন এবং সৃজনশীলতার জন্য তৈরি করা যেতে পারে। তবে এটি মনে রাখতে হবে, এটি উল্লেখযোগ্য নৈতিক দ্বন্দ্ব ও উদ্বেগও উত্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে যখন জনসাধারণের কাছে ভুল তথ্য বা নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই গবেষকরা ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহারের সময় সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এর মানে হচ্ছে, যা ডিজিটাল কনটেন্টে দেখা যায় বা দেখা হয়, সব সময় তা বিশ্বাসযোগ্য না-ও হতে পারে।
ডিপফেক প্রযুক্তি থেকে উৎপাদিত ভিডিও কনটেন্ট, বস্তু অথবা যে কোনো কিছু বিনোদনমূলক কনটেন্টের জন্য ভালো। তবে আমাদের সমাজে নীতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করার জায়গাটা মারাত্মক সংবেদনশীল। এটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেয় বা অন্যকে অপরাধ বা তথ্যের অপব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ডিপফেকের তথ্য ব্যবহার করে মানুষ এমন কিছু করতে পারে, যা ব্যবসা ও মানুষের বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর, শিশুদের শিক্ষার অন্তরায়, সামাজিক নৈতিকতা এবং সত্যতা ও বিশ্বাসের জন্য হানিকর। ডিপফেক প্রযুক্তির প্রভাব এবং জাল কনটেন্ট তৈরির কারণে আমাদের সমাজে এক ধরনের হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়, যা মানুষের মধ্যে এমন কিছু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারে, যার বস্তুত কোনো বাস্তবতা নেই অথবা যদি থেকেও থাকে তবে তা যে কোনো সময় যে কোনো মাধ্যমে জাল ছবি বা জাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে অসত্য চিন্তাভাবনা তৈরি করতে পারে।
জাল বা নকল খবরের বিস্তারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকার একটি জাল সংবাদ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা পরিচালনা করে, যাকে ‘ই-সেফটি’ উদ্যোগ বলা হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মুক্তির উপায়
- ডিপফেক