
‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’
মাদক গ্রহণ এমন এক অপরাধ, যা একপর্যায়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না; বরং সে নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে চাইলেই যখন- তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা যায় না; অর্থাৎ এক সময় সে নেশাকে ছাড়তে চাইলেও নেশা তাকে সহজে ছাড়ে না বা ছাড়তে চায় না। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, এই নেশার জগৎ ক্রমাগত বড় হচ্ছে। সব বয়সী, সব শ্রেণি পেশার মানুষের এক বিরাট অংশ নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন। সুবীর নন্দীর গানের সাথে গলা মিলিয়ে বলা যায় ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’। ফলে বাড়ছে অপরাধ, সামাজিক অস্থিরতা। নেশার টাকা জোগাতে গিয়ে সন্তানের হাতে পিতা, কখনো পিতার হাতে সন্তান খুন হচ্ছেন। গুগল সার্চ দিলেই পাওয়া যায় এমন অসংখ্য করুণ ও মর্মান্তিক ঘটনা।
এমন এক পরিস্থিতিতে আজ (২৬ জুন বৃহস্পতিবার) বিশ্ব মাদকবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিবছর ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালনের। সামাজিক সুস্থতা বজায় রাখতে, মানুষকে মাদকের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে এই দিবসটি পালন করা হয়। মাদকবিরোধী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-"আসুন, সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সুস্থ জীবন গড়ি।" জাতিসংঘ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে সবাইকে শামিল হতে হবে।
নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ।
দুঃখজনক যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসা ও সেবন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে বাইরেই থাকছে। যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ মাদক কারবারিতে জড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত এলাকায় যেসব থানা আছে ওইসব থানার পুলিশ সদস্যরাই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে বেশি।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর খুরের মুখ, ঘোলার পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া সৈকত, সাবরাং কচুবনিয়া, হারিয়াখালী, কাটাবনিয়া, খুরের মুখ, আলীরডেইল, মুন্ডারডেইল, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেষখালীয়া পাড়া সৈকত, নোয়াখালী পাড়া, কুনকার পাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, শীলখালী, মাথাভাঙ্গা, বড়ডেইল, উখিয়ার ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কুমিল্লা, দিনাজপুর. সিলেট, ফেনী, বি-বাড়িয়া, আখাউড়া, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনাসহ অন্তত ৩২টি জেলায় মাদক কারবারিদের তৎপরতা বেশি।
মাদক চোরাচালানের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। এছাড়া কারাগারেও রয়েছে মাদকের জমজমাট ব্যবসা। রাজধানীর উপকণ্ঠে সম্প্রতি স্থানান্তরিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে অভিনব কায়দায় মাদক ও বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য পাচারের অভিযোগ উঠেছে। কারাগার কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অনেক সময় চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ঢোকে কারাগারে। মোবাইল ফোন দিয়ে কারাগারে বসে শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের মাদকব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের খবরও অজানা নয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস