-685b13e13d770.jpg)
দেশের সামনে তিনটি অনিবার্য চ্যালেঞ্জ
বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্থা যে আদৌ ভালো নয়-এটি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ইসরাইল কর্তৃক ইরান আক্রমণ তার পূর্বাভাস। আমি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হব, কিন্তু তোমাকে হতে দেব না। কারণ তোমার জাত-কুলকে যে কোনো কলাকৌশলে আমরা বিভাজন করব এবং দাবিয়ে রাখব; পারলে নিশ্চিহ্ন করে ফেলব। তোমার স্বজাতিদের ছেলেভোলানো ললিপপ হাতে দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ভুলিয়ে রাখব, শোষণ করব, মুখোশ পরে আপন হওয়ার অভিনয় করব, দমন করব। জাতিগত এ হিংসাত্মক বিভেদ শুরু হয়েছে ক্রুসেড থেকে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী, আধিপত্যবাদী শক্তি ও জায়নবাদী শক্তি এ বিষয়ে একাট্টা; সঙ্গে তাদের কৌশলী কুশীলব। মুসলমান মরে প্রায় শেষ হওয়ার পর মীমাংসা করতে গুরুরা আসে। এর আগে দূরে বসে মজা দেখে, মন্তব্য করে। ভেতরে আছে অব্যক্ত-অকথিত থিও-পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট। ‘আমার ভেতরে-বাহিরে অন্তরে-অন্তরে আছো তুমি হৃদয়জুড়ে...’। সতীর্থ উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতের বুদ্ধি কীভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা, সম্পত্তি কৌশলে দখলে নিয়ে তাদের নির্জীব করা যায়, ভারত থেকে বিতাড়িত করা যায়। পাকিস্তানে আক্রমণের ঘটনায়ও দেখা গেল-প্রথমেই মসজিদ-মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থাপনাগুলো ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ওদের প্রথম শত্রু। এদেশও বিশ্বব্যবস্থার একটা অংশ।
এবার এদেশের কথা বলি। গতদিন বলেছিলাম, এদেশের সব দুর্দশা, শোষণ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, হত্যাযজ্ঞ, অপশাসনের মূলে মূলত ভারত ও তাদের সেবাদাস। এদেশকে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এবং এভাবেই এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশকে গ্রাস করতে চায়, চুষে খেতে চায়, এদেশের নামটা মুছে দিতে চায়; আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এদেশ থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠী উধাও করে দিতে চায়। এরা কখনো এদেশকে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকতে দেবে না। এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে লুকিয়ে থাকা মুসলমান নামধারী ভারতীয় দাসরা এ কাজে ভারতকে সহযোগিতা করবে। আমাদের তারা তাদের কূটকৌশল দিয়ে প্রায় কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। চুয়ান্ন বছরের মধ্যে কয়েকটা বছর বাদ দিলে তারাই কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে এদেশ শাসন করে এসেছে। নইলে শাপলা চত্বর হত্যাযজ্ঞে, পিলখানা বিদ্রোহের নামে সেনাসদস্য হত্যার সময়, ’২৪-এর গণহত্যায় অন্য ভাষাভাষী লোক হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়, কথা বলে কেন? সাক্ষী হারায়, মানুষ গুম হয় এদেশে, ভারতের জেলে খুঁজে পাওয়া যায় কেন? তখন সীমান্তের বাধা কোথায় থাকে? তাদের উগ্র আধিপত্যবাদের মধ্যে আছে-ধর্মীয় আগ্রাসন, এদেশের দাসদের মাধ্যমে রাজনৈতিক আগ্রাসন, অর্থনৈতিক আগ্রাসন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অপপ্রচার। এ আধিপত্যবাদের মোকাবিলা এ পর্যন্ত দুজন ব্যক্তিত্ব করেছেন। একজন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া; অন্যজন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এভাবে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া দেশের হাতে কোনো বিকল্প নেই। আমাদের তাদের হাত থেকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করতেই হবে। অর্থনৈতিক শোষণ থেকে বাঁচতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এদেশে ইসলামবিদ্বেষী দুই শ্রেণির দাস তারা পুষছে-এক হচ্ছে আওয়ামী লীগ নামের দাস; অন্যটা বাম রাজনীতির তল্পিবাহক তথাকথিত প্রগতিশীল দাস। উভয়ই ইসলামবিদ্বেষী। আমি ভারতের বামপন্থি রাজনীতি সম্বন্ধে জানি। তাদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও হিন্দু ধর্মবিদ্বেষী নয়। রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর বামপন্থিদের কথা জানি। তারা উগ্রবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী হয়ে প্রথমে সেসব দেশের প্যাগোডা, মসজিদ, গির্জা ইত্যাদি ভেঙেছিল। তাদের কউ কেউ বর্তমানে বাম আদর্শের ধারক; কিন্তু খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ ধর্মবিরোধী নয়। কিন্তু বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীলরা দাড়ি-টুপি মুসলমানিত্ববিদ্বেষী। অথচ তাদের বাপ-দাদা, আত্মীয়স্বজন সবাই মুসলমান। ইসলামবিদ্বেষী বামেরা ভুলে যান, তারা শুধু বাঙালিই নন, মুসলমানও বটে। নইলে ’৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জন্মই হতো না। তা না হলে আজও ভারতের মুসলমানদের মতো রাত-দিন নির্যাতন ও উচ্ছেদ আতঙ্কে তাদের ভুগতে হতো। নিম্নমানের নাগরিক হয়ে অচ্ছুত সম্প্রদায়ের মতো বাস করতে হতো। আমার ভাবতে অবাক লাগে, একটি রাজনৈতিক মতবাদ নিজস্ব সম্প্রদায়ের আত্ম-অস্তিত্বের আত্মবিনাশী হয়ে ওঠে কীভাবে? তা তারা ধর্ম পালন করুক, বা না করুক। টুপি-দাড়িওয়ালা লোক দেখলেই তাদের গা জ্বালা করে। তাদের রাজাকার ও জঙ্গি বলে গালি দেয়। তাদের ধ্বংস ও উচ্ছেদে অনুঘটক হয়ে কাজ করে। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ মুসলমানদের ৮০-৯০ শতাংশ লোকের জন্মই হয়নি। বুঝি না মুসলমানদের দোষটা কোথায়। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইসলামবিদ্বেষী হওয়ায় এদের দাসরাও ইসলামবিদ্বেষী! এরা নিশ্চয়ই আত্মবিনাশক ও আত্ম-হন্তারক হতে চায়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অসংখ্য জাতি ও জনগোষ্ঠীর নাম বইতে থাকলেও বাস্তব অস্তিত্ব বিশ্বে এখন আর অবশিষ্ট নেই। আমার সন্দেহ, বাঙালি মুসলমানরা সেদিকে যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিকদের সেই বুদ্ধিতে ধরেছে।
’২৪-এর বিপ্লবের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও দেশরক্ষার যে স্বপ্ন এদেশ দেখেছিল, তা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে উন্মাদ হয়ে উঠেছি। আমাদের বিনাশের মূলে আমরাই। এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, সংখ্যালঘু নির্যাতন-সবই ভারত ও তার দাসদের অপপ্রচার ও নাটক-এটি কে না বোঝে! এদেশের একটা রাজনৈতিক ও ক্ষমতাশালী শক্তি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
আজ ষাট বছর ধরে এদেশে যত বামের জন্ম হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ বাম মতবাদের অসারত্ব বুঝতে পেরে ক্রমেই আস্তিক হয়ে উঠেছে এবং মুসলমান হয়ে নামাজ ধরেছে। কিছু কিছু বাম অন্য দলে যোগ দিয়েছে, কেউ খোলা ময়দানে বুদ্ধিজীবী নামাবলিতে ঘুরছে। এরা ইসলামবিদ্বেষী, উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও জায়নবাদী। এরা ভারতের মোদিবাদ ও উগ্রবাদী শক্তির সহযোগী। এরা বস্তুবাদী, ভোগবাদী ও অসার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী। এরা ইনক্লুসিভ সোসাইটির অন্তরায়। এদের কর্মচিন্তা ও রাজনৈতিক মতবাদ প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী, এদের মতবাদ অচল, অকেজো-তাই বিশ্বব্যবস্থা থেকে বিলীন হয়ে গেছে।