প্রজাপতিও কি হারিয়ে যাচ্ছে

www.ajkerpatrika.com ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ১৩:০৭

বাংলাদেশে একসময় একটি গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল—প্রজাপতিটা যখন তখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রাঙা মেঘের মতন/বসে আমার আকাশজুড়ে/ বসে আমার আকাশজুড়ে যখন তখন।


প্রজাপতি নিয়ে অবশ্য আমাদের মধ্যে মজার গল্পও প্রচলিত আছে। যার গায়ে প্রজাপতি বসবে, তারই বিয়ে হবে শিগগিরই। প্রজাপতি একটি পতঙ্গ হলেও এর রং ও পাখার কারণে এটি বেশ আকর্ষণীয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই প্রজাপতি মেলা হয়। যে বিভাগটি এর আয়োজন করে অর্থাৎ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, আমি সেখানকার ছাত্রও। যিনি এই মেলা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন, আমি তাঁর ছাত্রও বটে। আমি যখন বন্য প্রাণিবিদ্যা নিয়ে মাস্টার্স করছি, তখন পাখি মেলা নিয়ে কাজ করেছি। সে সময় একই বিভাগের কীটতত্ত্ব বিভাগ প্রজাপতি মেলা শুরু করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর পাখি মেলাও হয়। বলতে গেলে আমরাই প্রথম প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে পাখি মেলা করি। আগে অবশ্য পাখিবিদ ইনাম আল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংগঠনকে নিয়ে এই মেলা করতেন। তো একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে প্রতিবছর দুটি মেলা হয়। তাও প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে। দুটি মেলারই উদ্দেশ্য সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিয়ে। অর্থাৎ প্রজাপতি মেলার উদ্দেশ্য শুধু প্রজাপতি চেনা নয়, একে সংরক্ষণ করাও।


এখন এই প্রজাপতিই নাকি হারিয়ে যেতে বসেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতি নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশের প্রজাপতির সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সেখানকার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সে দেশের প্রজাপতির সংখ্যা কমেছে ২২ ভাগ। সে দেশে তালিকাভুক্ত প্রজাপতির সংখ্যা ৫৫৪টি। ৭৬ হাজারেরও বেশি সমীক্ষা ও ৩৫টি পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। এখানে প্রায় ১২.৬ মিলিয়ন প্রজাতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, প্রজাপতির অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে রয়েছে। গত ২০ বছরে সেখানে প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি প্রজাপতি হারিয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০টির বেশি প্রজাতির প্রজাপতি ৫০ ভাগের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা এমন তথ্যে শঙ্কিত। কেননা প্রজাপতি হ্রাস মানে তো শুধু প্রজাপতির বিলুপ্তিই নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র।



পৃথিবীতে এই প্রজাতির সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। বাংলাদেশে এই প্রজাপতি প্রজাতির সংখ্যা ৪২০টির বেশি। বাংলাদেশেও এসব প্রজাতি খুব একটা সুবিধায় নেই। আইইউসিএন—ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশন কাজ করে উদ্ভিদ-প্রাণী প্রভৃতি সংরক্ষণ নিয়ে। এই সংস্থাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতি জরিপ করে লাল তালিকার বই প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ২০১৫ সালেই বলেছে, বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাপতির প্রজাতি রয়েছে একটি। এ ছাড়া বিপন্ন ১১২টি, সংকটাপন্ন ৭৫টি প্রজাতি। তার মানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের প্রজাপতিগুলোও।


কিন্তু ভাবছেন, এই প্রজাপতি হারিয়ে গেলে কী এমন ক্ষতি হবে? বিজ্ঞানীরা এর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কেন এত শঙ্কিত? ভাবছেন, এই প্রজাপতি যদি হারিয়ে যায়, তাহলে তো আর কারও শরীরে বসবে না! তাহলে কি আমাদের বিয়েও আটকে যাবে? হা হা হা। সে না হয় না যাক। তবে পরাগায়ন, পচন, খাদ্যশৃঙ্খলা ভঙ্গ থেকে শুরু করে অনেক কিছুরই সমস্যা হবে।


মৌমাছি, পাখি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের মতো প্রজাপতিও পরাগায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। পরাগায়ন মানে এক ফুলের পরাগ রেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তর। যদি এই পরাগায়ন না হয়, তবে উদ্ভিদের প্রজনন ব্যাহত হবে। এই কারণে উদ্ভিদের বৈচিত্র্য শুধু কমে যাবে না, প্রজাতি বিলুপ্তিরও আশঙ্কা দেখা দেবে। প্রজাপতির লার্ভা পাতা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে পাতা পচাতে সাহায্য করে। আবার প্রজাপতির লার্ভা পাখি, ব্যাঙ, টিকটিকি ইত্যাদির খাবার। প্রজাপতি না থাকলে এই খাবার সংকট সৃষ্টি হবে। খাদ্যশৃঙ্খলা ব্যাহত হবে। প্রজাপতির পর্যটনশিল্পেও ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়। মানুষের মন ভালো থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।


নানা কারণে এই উপকারী বন্ধুটি হারিয়ে যেতে বসেছে। কৃষিতে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার এর অন্যতম কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থানের পরিবর্তনও একে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে এর সংখ্যা বৃদ্ধিতে একটি কাজ করতে পারি। তা হলো ফুলের গাছ লাগানো। এতে তারা বাসস্থান পাবে। এই বাসস্থানই প্রজাপতির সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও