বাজেট কেন কাজ করে না

প্রথম আলো মামুন রশীদ প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫, ১২:৫৩

আমরা জানি, বাজেট উপস্থাপন একাধারে আর্থিক পরিকল্পনা; আবার রাজনৈতিক অঙ্গীকারেরও বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এবারের ২০২৫-২৬ বাজেট এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে এসেছে। বৈশ্বিক মন্দা, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা এ বাজেটকে অতীতের তুলনায় ভিন্নমাত্রায় মূল্যায়নের সুযোগ এনে দিয়েছিল।


কিন্তু সামগ্রিক পর্যালোচনায় এবারও বাজেট আমাদের জাতীয় পুঁজির সংবর্ধনের একটি নির্ভরযোগ্য রূপকল্প দিতে পারেনি। এখানে-ওখানে সামান্য কৃচ্ছ্রসাধনের ইঙ্গিত থাকলেও ভবিষ্যৎমুখী তৎপরতা নেই। আছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগও, তবে অনেকটাই সোনার হাঁস মেরে ফেলার মতো এলোপাতাড়ি তৎপরতা। এতে জাতির ভবিষ্যৎযাত্রা কণ্টকমুক্ত হবে না।


৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এ বাজেট এখনো পরিস্থিতি ও ব্যয় বরাদ্দ বিবেচনায় উচ্চাভিলাষী। অঙ্কের এ বিশালতা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা এখনো মূল প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় যে দিকটি শুরুতেই আলোচনার দাবি রাখে, তা হলো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা। এনবিআরের ওপর নির্ভর করে সরকার পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিগত তিন অর্থবছরের হিসাব দেখলে দেখা যায়, প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, কখনো প্রশাসনিক অদক্ষতা, কখনো করনীতির অস্বচ্ছতা, কর অব্যাহতি আবার কখনো করদাতাদের আস্থার অভাবের কারণে।


অথচ বাজেট বক্তৃতায় করকাঠামো সংস্কারের কোনো কার্যকর রূপরেখা এখনো দৃশ্যমান নয়। করের আওতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও কর আদায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রণোদনার পরিবর্তে বাধ্যবাধকতা আরোপ কিংবা কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যায়নি। অন্যদিকে সবাই বলছেন, মধ্যবিত্ত ও উঠতি মধ্যবিত্তের জন্য উচ্চ কর আদায় তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে সংকুচিত করবে।



ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাতে সন্দেহ নেই, অবকাঠামো উন্নয়ন একটি প্রয়োজনীয় ধারা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা যখন প্রকট, তখন কেবল বরাদ্দ দিয়ে কতটুকু অগ্রগতি সম্ভব। বিগত বছরগুলোয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের হার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।


বহু প্রকল্প সময়মতো শেষ হয় না, আবার প্রকল্প ব্যয়ের হিসাবেও স্বচ্ছতা নেই। নেই যথাযথ নজরদারি। উন্নয়নের নামে অনেক সময় দেখা যায় একটি পদচারী-সেতু বা ছোট একটি উপজেলা সড়ক তৈরিতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা ঢাকার অভিজাত এলাকায় একটি চারতলা ভবন তৈরির সমান। ফলে প্রশ্ন আসে, উন্নয়ন ব্যয় আসলেই জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।


মূল্যস্ফীতি এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংকট। গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, খাদ্যপণ্যে তা ১২ শতাংশেরও ওপরে। এ অবস্থায় শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও পল্লি এলাকার সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কেবলই সংকুচিত হচ্ছে। বাজারে গেলেই বোঝা যায় মানুষ কীভাবে দিন পার করছে।


অথচ বাজেটের ভাষা এতটাই বিমূর্ত ও হিসাবনির্ভর যে সেখানে মানুষের ভোগান্তির বাস্তব চিত্রের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। প্রস্তাবিত বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো নীতিগত বা অভিনব হস্তক্ষেপও নেই। নেই শহরে রেশনিং-ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব, নেই ভর্তুকিভিত্তিক গণপরিবহন বা আবাসন খাতে কোনো সরাসরি সহায়তা। উল্টো বরং গণপরিবহনে খরচ বাড়বে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে কিছু বরাদ্দ বাড়লেও তা মাথাপিছু সংখ্যার হিসাবে একেবারেই নগণ্য। গুণগত বরাদ্দ আর অনিয়মের কথা নাহয় আপাতত বাদই দিলাম।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও