
চামড়ার দেশেই বছরে ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি
দেশে নিজস্ব কাঁচামালনির্ভর রপ্তানিপণ্যের মধ্যে চামড়া অন্যতম। এটি দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিপণ্য, যা এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আন্তর্জাতিক সনদ মিলছে না। গত এক দশকে চামড়ার দাম না বেড়ে উল্টো কমেছে বলা যায়। বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। শুধু কি তাই? কাঁচা চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ এই দেশে এখন বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উন্নত দেশে জুতা রপ্তানি করতে গেলে আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশে চামড়া প্রক্রিয়াকরণব্যবস্থা তথা সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সেই মানের না হওয়ায় এ সনদ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিজেদের চামড়া গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও দেশের রপ্তানিমুখী জুতা কোম্পানিগুলোকে চীন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে চামড়াপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়, যা এর আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের অক্টোবর–মার্চ ছয় মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার বা ৯৭৬ কোটি টাকার চামড়াপণ্য। এসব আমদানির মধ্যে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী, ভ্রমণব্যাগ, হাতব্যাগ, পশুর নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি পণ্য ও ঘোড়ার সাজসজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, এলডব্লিউজি সনদ পেতে মোট ১৭১০ নম্বরের মধ্যে ৩০০ নম্বর পেতে হয় সিইটিপিতে; কিন্তু সরকার এটা ঠিকভাবে নির্মাণ করতে পারেনি। তাই সাভারের ১৫–১৬টি ট্যানারি মানসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। তাই চামড়ার চাহিদা বাড়ানো যাচ্ছে না, উপযুক্ত দামও মিলছে না।
মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘দেশের ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট না হওয়ায় তাঁদের বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হয়। যদিও আমাদের দেশের চামড়া যথেষ্ট গুণগত মানসম্পন্ন। ২০১৬ সালে আমাদের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ডলারের চামড়া পণ্য রপ্তানি হতো। ১০ বছর পর রপ্তানি এখনো সেই এক বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই রয়েছে। অথচ একই সময়ে ভিয়েতনাম এটা ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে ফেলেছে।’
- ট্যাগ:
- ব্যবসা ও অর্থনীতি
- চামড়া ব্যবসা