মানুষ বলতে আমরা যেন মানুষই বুঝি

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৫, ১৩:১৯

বিভিন্ন আলোচনার টেবিলে একটা কথা শোনা যায়, সমাজে সিস্টেমেটিক ডিসক্রিমিনেশন বা প্রথাগত বৈষম্য চলছে। কীভাবে বা কাদের ক্ষেত্রে চলছে? বাংলাদেশে এই সিস্টেমেটিক ডিসক্রিমিনেশনের সবচেয়ে বড় শিকার দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের জীবন-জীবিকার করুণদশা ও অত্যাচারিত হওয়ার মাত্রা দেখে সহজেই বোঝা যায় এই মানুষগুলো কীভাবে প্রথাগত বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছেন। কোন আইন, কোনো সিস্টেম এদের পক্ষে কথা বলে না। এদের পাশে নেই কোনো রাজনৈতিক সহায়তা।


সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাগতভাবে বৈষম্য ও অবহেলার শিকার এই মানুষগুলো। তাদের জীবনের শুরু এই বৈষম্যের মাধ্যমে, শেষও তাই। দলিত-হরিজনরা কেন এত বেশি বৈষম্যের শিকার? প্রথম কারণ সমাজের চোখে তারা ‘নীচু জাত’, আর একারণেই এরা বেশি বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যের শিকার বলেই এদের আর কখনোই মাথা উঁচু করে বাঁচা হয় না। এই মানুষগুলোর জীবনযাত্রার মান খুব নীচু। এরা সমাজে বিচ্ছিন্ন ও উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। অথচ এই মানুষগুলোর ভূমিকা আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বা বলা যায় অপরিহার্য। প্রতিদিন শহরকে পরিষ্কার করার দায়িত্ব তাঁদের। ঘরবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ, কোরবানির পরপরই বর্জ্য নিষ্কাশন, জুতা সেলাই করার কাজসহ আরো অসংখ্য জরুরি কাজের সঙ্গে জড়িত এই মানুষগুলো। এরা শুধু যদি একদিন কাজ থেকে বিরতি নেন, শহরের আবর্জনা নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সাহেব-সুবা মানুষ নাকে-মুখে রুমাল চেপেও রক্ষা পাবেন না।


সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪৩.৫৮ লাখ এবং হরিজন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১২.৮৫ লাখ। তবে, এই সংখ্যাগুলো জরিপের সময় এবং পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। এই মানুষগুলো সবাই অনগ্রসর মানুষ এবং জন্মগত পরিচয়ের কারণে সমাজে ‘অস্পৃশ্য’।



এই সমাজে বারবার নানাভাবে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দলিত হরিজন কমিউনিটির মানুষ। তাদের প্রতি ঘৃণার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা খুব সাধারণ। আমরা এখনো অনেকেই জানিনা বাংলাদেশেও এই বৈষম্য কতটা প্রকট। সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে, বাসা ভাড়া নিতে গেলে, জমি কিনতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। এছাড়াও স্কুলে, হাসপাতালে, বিচার চাইতে গেলে বা দাওয়াত খেতে গেলে উপেক্ষার শিকার হন। দাওয়াত বাড়িতে এদের বসার জায়গা আলাদা থাকে। এমনকি মাটিতে কলাপাতা বিছিয়ে খেতে দেয়া হয়, পানি দেয়া হয় মাটির বদনায়, যাতে এগুলো ফেলে দেয়া যায়। এমনকি এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার জন্য আলাদা প্লেট-গ্লাস-কাপ দেয়া হয়।


এরকম বহু নজির আছে সমাজে। স্কুলে দলিত শিশুরা তাদের সহপাঠীদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়, হাসি-ঠাট্টা ও বুলিং এর শিকার হয়। ক্লাসে বসার জন্য দলিত শিশুকে আলাদা বেঞ্চ দেওয়া হয়। এমনকি শিক্ষকরাও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। সমাজের চোখে এরা এতোটাই অপাঙ্ক্তেয় যে কোনো কোনো এলাকায় এদের পানি সংগ্রহের কল বা পুকুর এবং শশ্মানও ভিন্ন। কখনো কখনো নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়।


বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দলিত-হরিজন শিশুদের ক্যাপ ও গেঞ্জি দেয়া হয়নি। এটা নিয়ে পরবর্তীতে সমালোচনা হলে কর্তৃপক্ষ দুঃখপ্রকাশ করেছিল। সম্ভবত এটি যশোরের ঘটনা। এছাড়াও স্কুলে অনুষ্ঠান হলে সুইপার বা মেথরের সন্তানকে দিয়ে দিয়ে স্কুলের টয়লেট পরিষ্কার করানোর মতো বিশ্রী ঘটনাও ঘটেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও