
নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কিত পণ্যে আগামী ১০ বছর বড় ধরনের করছাড় দেয়া উচিত
আতিকুর রহমান সরকার সোহেল, প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, মুসপানা। দেশের শীর্ষস্থানীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগে কাজ করেছেন টেলিকম খাতে। পড়াশোনা করেছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়।
উন্নত বিশ্ব ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা ভাবছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু এগিয়েছি? নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? কেন এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি?
আতিকুর রহমান সরকার সোহেল: বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে তেমন বৈচিত্র্য নেই। আমরা কেবল সোলার বা সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করছি। বাংলাদেশে যেহেতু সূর্যের আলো ভালো পাই, তাই সৌরশক্তিই প্রধান। কিন্তু সৌরশক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো জমির অভাব। তবে যতটুকু সুবিধা আছে ততটুকুও আমরা ব্যবহার করছি না। বাড়ির ছাদ ও পতিত জমিতে সৌরশক্তি উৎপাদন করা যায়। এ মুহূর্তে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে। একসময় মনে হতো, প্রতি কিলোওয়াট সোলার থেকে প্রতিদিন সাড়ে তিন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এখন আমরা দেখছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যুৎ প্রাপ্তি পাঁচ ইউনিটও অতিক্রম করেছে। সক্ষমতা ও সার্বিক কর্মকাণ্ড সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভালো এবং আশাব্যঞ্জক। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয় হচ্ছে তা যেকোনো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের চেয়ে অনেক কম। বাংলাদেশে অনেক দেরিতে হলেও এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের গুরুত্ব পাচ্ছে।
সরকারি খাতে না হয় প্রণোদনাসহ নানা ঘাটতি আছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়ছে না কেন? বেসরকারি খাত কেন এটিকে লাভজনক মনে করছে না?
আতিকুর রহমান সরকার সোহেল: বর্তমানে বেসরকারি খাত নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন লাভজনক মনে করছে। গত দুই বছর অনেক বেসরকারি খাত, বিশেষ করে গার্মেন্টস ও নিট শিল্পের ছাদগুলোয় সৌরশক্তির ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ যারা অনেক বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তারা এখন সৌরশক্তির দিকে ঝুঁকছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান দুই থেকে পাঁচ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এভাবেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা হচ্ছে, আমরা প্রয়োজনমাফিক ২০০ কিলোওয়াট, ৫০০ কিলোওয়াট ও ১ মেগাওয়াট সক্ষমতার সোলার প্যানেল লাগাতে পারছি। অর্থাৎ যার যতটুকু দরকার সে ততটুকুই ব্যবহার করতে পারে। আগে নেট মিটারিং ব্যবস্থা ছিল না। এখন পুরোদমে এটি কার্যকর। প্রতিনিয়ত এটি আপডেট হচ্ছে। ইউরোপের মডেলের মতোই বাংলাদেশ এগোচ্ছে। তবে এটি সত্য, আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা তাদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা উচিত। এটি অবশ্যই ব্যয়সাশ্রয়ী এবং লাভজনক হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে সম্মিলিতভাবে বড় আকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
ভোক্তা পর্যায়ে প্রধান চিন্তার জায়গা হচ্ছে এর স্থাপন ব্যয়। এ সংকট মোকাবেলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা যেত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ নেক্সাস বা সংযোগ কেন তৈরি হচ্ছে না? ঋণ প্রদান বা অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বাধা রয়েছে?
আতিকুর রহমান সরকার সোহেল: বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের ক্ষেত্রে বড় পরিসরে কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি ও ব্যাংক এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ছোট পরিসরে (১০ লাখ টাকা) নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চাওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা এখনো নেই। এক্ষেত্রে কাজ করা দরকার। যারা প্রান্তিক পর্যায়ে বা ছোট আকারে বিনিয়োগ করতে চায় তারাও যেন করতে পারে। তাই এ বিষয়ে আরো উদ্যোগ নেয়া জরুরি। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ছোট বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাবাদী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও স্যানিটেশন থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এসব এনজিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রান্তিক বা গ্রামীণ পর্যায়ে কাজ করতে পারে কিনা?
আতিকুর রহমান সরকার সোহেল: এনজিওগুলো কাজ করছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে সৌরশক্তির ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে, যা গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এ প্রকল্পগুলো মূলত ছোট কিস্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা গ্রামীণ জনগণের জন্য সহায়ক ছিল। মানুষ ছোট সোলার সিস্টেম ব্যবহার করে টিভি ও লাইট চালাত। কিন্তু এখন মানুষের চাহিদা বদলেছে। তারা ফ্রিজ, এমনকি এসি চালাতে চায়। ফলে বিদ্যমান ছোট সোলার সিস্টেম অনেকের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। নতুন প্রযুক্তি ও বড় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য ফাইন্যান্সিং নিশ্চিত করা যায়, উচ্চ ক্ষমতার সৌর ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে গ্রামীণ পর্যায়ে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ আরো কার্যকর করা সম্ভব।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি