এবারের বাজেট যেন আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া

বণিক বার্তা বিরূপাক্ষ পাল প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৫৭

গ্রামের ঘরজামাই যত জ্ঞানী-গুণীই হোন না কেন, তিনি ওই পাড়ার আর দশটা ছেলের মতো নন। একটি অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য এখানেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ সংস্কার ও নির্বাচন। যেহেতু সংস্কারের ব্যাপারে সরকার গত ১০ মাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি, সেহেতু সরকারের কাজ হবে সুষ্ঠু ও ‘বহুত্ববাদী’ একটি নির্বাচন দিয়ে সসম্মানে বিদায় নেয়া। অর্থনীতির নিরিখেও দ্রুত নির্বাচনের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে অর্থনীতি যে কিছু ভালো সংকেত দিচ্ছে তা সত্যি। কিন্তু তা সার্বিক অর্থনীতির কৃতিত্ব দাবি করে না। তাই নির্বাচনমুখিতা জরুরি। কিন্তু বাজেটে তার কোনো লক্ষণ নেই। মনে হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার হেলেদুলে বাজেট দিয়েছে। এটি তাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বছর। অহেতুক বড় মাপের প্রতিশ্রুতিগুলো এসেছে। তার চেয়েও বেশি এসেছে বাগাড়ম্বর। মনে হচ্ছে সুদূরাগত ঘরজামাই পাড়ার ছেলের মতো আচরণ করছে।


সরকার বাজেট রচনার প্রাক্কালে জানে না নির্বাচন ঠিক কোন মাসে হবে। সেক্ষেত্রে বাজেটের ‘প্ল্যান বি’ থাকা উচিত ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের চাপে সরকার যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় তাহলে এ বাজেটের কোনো মানে হয় না। সরকার এক্ষেত্রে একটি ছয় মাসের বাজেট দিয়ে ২০২৬ সালকে নতুন অর্থবছরের সূচনা হিসেবে দেখাতে পারত। ইংরেজি বছরের সঙ্গে অর্থবছরকে মিলিয়ে দিলে অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বাড়বে এ দাবি অনেক অর্থনীতিবিদের। এতে সংস্কারও হতো, বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতাও থাকত। ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়ে গেলে জানুয়ারি থেকে নির্বাচিত দল তাদের মতো করে আয়-ব্যয় নিষ্পন্ন করে সে অংকগুলো সংশোধিত বা ‘রিভাইজড’ বাজেটে সেগুলো পাস করিয়ে নেবে। তাহলে বাজেট ‘গোয়ালে না-থাকা কাজির গরু’র মতো হয়ে গেল। আবার এ সরকার যদি জুন পর্যন্ত সিংহাসন আঁকড়ে থাকে তাহলে এ বাজেট তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক হলেও বাস্তবায়নযোগ্য নয়।


রাজস্ব আয় বর্তমান বছরের ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি থেকে আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায় টেনে তোলা অর্থাৎ প্রায় শতকরা ৯ ভাগ প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন রাজস্ব আয় আদায় করা এ সরকারের পক্ষে সহজ কাজ হবে না। কাজটি আরো কঠিন বা অনেকটা দুঃস্বপ্নতুল্য হয়ে পড়েছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কলকারখানা বন্ধ হওয়া, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের প্রগতি কমা, শেয়ারবাজার দিন দিন অধঃপতিত হওয়া, পুঁজি ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমা, নতুন করে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া ও সর্বোপরি জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মতো অলক্ষুনে সংকেতমালা থেকে।


এসব পরিস্থিতির মধ্যে রাজস্ব আদায় করতে গেলে সরকারকে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত মায়ের গান শুনতে হবে ‘বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে’। ব্যবসায়ীদের ভালো উপার্জন না থাকলে তারা কোত্থেকে কর দেবেন? নথিবদ্ধ নির্দিষ্ট আয়ের চাকুরেরা শুধু কর দিতে বাধ্য হবেন। দীর্ঘ চার বছরের মূল্যস্ফীতির ফলে তাদের আয়ের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কারণ সরকারি হিসেবেই মজুরি বৃদ্ধির হারকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। সঞ্চয়পত্রের নেট বিক্রয় ঋণাত্মক হওয়া মধ্যবিত্তের এ দুর্বলতার আরেক চিহ্ন। বাংলাদেশের ওপর বিশ্বব্যাংকের দেয়া নব-উজ্জীবিত দারিদ্র্য প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে বিক্ষিপ্ত কিছু জৌলুস সরকার দেখাতে পারলেও দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুত করতে পারছে না। উপরন্তু ঐকমত্যের নামে কালক্ষেপণ ও সংস্কারের নামে বহুমুখী অস্পষ্টতা অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে বিনিয়োগকে বিষণ্ন করে তুলছে। ঝুঁকি বাড়ছে।


২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শেষতক ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে বলে সরকার অনুমান করছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করবে। আগামী অর্থবছরে অনাদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে হয়। চলমান অর্থবছরে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঢেউ আগামী অর্থবছরকে বেশি আহত করবে। এটি টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর বিলম্বিত বিড়ম্বনার মতো। উপরন্তু নির্বাচন নিয়ে বড় দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দরকষাকষি বাড়লে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়বে। সরকারের ক্রমবর্ধমান নিষিদ্ধায়ন প্রকল্পের শিকার সংগঠনগুলোও এ অস্থিরতায় আড়াল থেকে শক্তি জোগাবে।


একমাত্র পাকিস্তান বাদে প্রতিবেশী বা নিকট দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো না হওয়ার ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট নিয়োগ ও বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগে তার ছায়া পড়েছে। পুঁজিপণ্যের আমদানির প্রবৃদ্ধি দিনে দিনে শুকিয়েই যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ার ভালো উপায় দেখা যাচ্ছে না। যদি অনাদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যায় তাহলে রাজস্ব দিয়ে শুধু পরিচালন ব্যয় মেটানো যাবে অথবা সরকারকে ঋণ করে চাকুরেদের বেতন দিতে হবে। ঋণ না পেলে টাকা ছাপাতে হবে। এমন অবস্থায় ‘বাজেটের লক্ষ্য সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন’—অর্থ উপদেষ্টার এমন উচ্চাভিলাষী বচনসুধা সরকারের আসল সক্ষমতার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও