সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের কোন পদ্ধতি বেশি কার্যকর

প্রথম আলো বদিউল আলম মজুমদার প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৫, ১২:৪০

নারীরা বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী, তাই জাতীয় সংসদে অর্ধেক প্রতিনিধিত্ব থাকা তাঁদের ন্যায্য অধিকার। নারীরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হলে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারলে, তাঁদের অধিকার সুনিশ্চিত ও সর্বক্ষেত্রে তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান এবং তাঁদের মেধা, সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। বাংলাদেশের নারীদের পশ্চাৎপদ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা’র অঙ্গীকার করা হয়েছে।


বর্তমানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে, যা মোট আসনের মাত্র ১৪ শতাংশ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসারিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়। কমিশন প্রতি তিনটি সংসদীয় আসন নিয়ে নারীদের জন্য একটি আসন সৃষ্টি এবং সেসব আসন থেকে নারীদের সরাসরিভাবে নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব করে। এই পদ্ধতি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে বিদ্যমান। এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত নারীদের আসনের আয়তন হবে সাধারণ আসনের তিন গুণ। তবে এ পদ্ধতিতে নারীদের আসন নির্ধারিত থাকবে এবং প্রতিবার নারীরা একই আসন থেকে অন্য নারীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।


অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সংসদের আসনসংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০-তে উন্নীত করে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ১০০টি আসনে নারীদের সরাসরিভাবে নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব করা হয়। ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে প্রথম মেয়াদে ৪০০টি সংসদীয় আসনের ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং এসব আসন থেকে শুধু নারীরা একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরাসরিভাবে নির্বাচিত হবেন। অন্য ৩০০ আসন থাকবে উন্মুক্ত, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।


দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত হবে এবং আগের সংরক্ষিত ১০০টি আসন উন্মুক্ত আসনে পরিণত হবে। তৃতীয় মেয়াদে অপর ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত হবে এবং আগের সংরক্ষিত ১০০টি আসন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। চতুর্থ মেয়াদে বাকি ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত হবে এবং আগের সংরক্ষিত ১০০টি আসন যথারীতি উন্মুক্ত আসনে পরিণত হবে। এভাবে চারটি মেয়াদে বা ২০ বছর মেয়াদে সম-আয়তনের প্রতিটি নির্বাচনী আসন থেকে একজন নারী সরাসরিভাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ধরনের পদ্ধতি ভারতের পঞ্চায়েতে (স্থানীয় সরকারে) বিরাজমান।



ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে প্রতি মেয়াদে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত হতে পারে লটারির মাধ্যমে, যার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পরবর্তী চার মেয়াদের জন্য কোন কোন আসন নারীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে, তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করবে। আরেকটি বিকল্প হতে পারে আসনের ক্রমানুসারে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম মেয়াদে আসন নম্বর ১, আসন নম্বর ৫, আসন নম্বর ৯ এবং এভাবে আসন নম্বর ৩৯৭ পর্যন্ত গিয়ে মোট ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।


দ্বিতীয় মেয়াদে আসন নম্বর ২, আসন নম্বর ৬, আসন নম্বর ১০ থেকে শুরু করে আসন নম্বর ৩৯৮ পর্যন্ত গিয়ে আবারও মোট ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তৃতীয় মেয়াদে আসন নম্বর ৩, আসন নম্বর ৭, আসন নম্বর ১১ থেকে শুরু করে আসন নম্বর ৩৯৯ পর্যন্ত মোট ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। চতুর্থ মেয়াদে অবশিষ্ট ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত হবে।


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপের সময়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ১০০টি করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তবে বড় কয়েকটি দলের এ সম্মতি ছিল শর্তসাপেক্ষ। কয়েকটি দল নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনের ব্যাপারে সম্মত যদি এ আসনগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের পাওয়া ভোটের হারের অনুপাতে অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে বিতরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি দল যদি সংসদ নির্বাচনে ২০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে সেই দল ১০০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ২০টি পাবে।


অন্য একটি পক্ষ ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার ব্যাপারে সম্মত, যদি এসব আসন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের পাওয়া আসনসংখ্যার ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়। এ ব্যবস্থায় একটি দল যদি সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসন পায়, তাহলে সেই দল ১০০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৫০টি পাবে। প্রসঙ্গত, এটিই আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থা, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।


লক্ষণীয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সাম্প্রতিক সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের ব্যাপারে মোট চারটি প্রস্তাব টেবিলে হাজির হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো: ১. বিদ্যমান ৩০০ আসনের প্রতি তিনটি আসন একত্র করে ১০০টি নতুন আসন সৃষ্টি এবং সেগুলো নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা; ২. সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০ করে সেগুলো থেকে ১০০টি আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নারীদের নির্বাচিত করা; ৩. সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০ করে তা থেকে ১০০টি আসন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে দলগুলোর মধ্যে বিতরণ করা এবং ৪. সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০ করে তা থেকে ১০০টি আসন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত আসনের হারের ভিত্তিতে অর্থাৎ বিদ্যমান পদ্ধতিতে দলগুলোর মধ্যে বিতরণ করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও