নির্বাচন এপ্রিলে কি আসলেই হবে
অনেক গড়িমসি ও জলঘোলার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক। প্রথমত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখই ঘোষণা করতে চাইছিল না। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই প্রথমে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনিই আবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
এর আগে নির্বাচন নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা সময় ঘোষণা না করায় নানা কথার ডালপালা ছড়াতে শুরু করে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের এই টালবাহানা জনমনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ধারণা করছেন, সরকার নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। অথবা অন্য কোনো দলকে সুবিধা দিতে চাইছে।
এ ক্ষেত্রে নতুন দল এনসিপির কথা উঠে আসছে। দলটি এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল। সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি না থাকার কারণে দেশজুড়ে দলটির কোনো বিস্তৃতি ঘটেনি। উপরন্তু, দলটি এখনো সভা-সমাবেশ করতে অন্য দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। ইসলামপন্থী একটি দল নিয়মিত সভা-সমাবেশে জনবল সরবরাহ করে বলে কানাঘুষা আছে। এ অবস্থায় দলটি নির্বাচনের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। তাই এনসিপিকে সুবিধা দিতেই সরকার নির্বাচন নিয়ে ঘোরপ্যাঁচ করছে এবং বিলম্বে নির্বাচন দিতে চাইছে—এমনটা ধারণা করা মোটেও অমূলক নয়।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন করা হবে। অল্প সংস্কার করলে ডিসেম্বরে নির্বাচন আর বেশি সংস্কার করলে জুনে নির্বাচন হবে বলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন আটকে রাখা অহেতুক কূটচাল ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা অব্যাহত থাকবে। সময়ের চাহিদা অনুসারে সংস্কার সম্পন্ন হবে। তাই সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা বা পিছিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
একধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যেই সরকার এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনের জন্য দেশের ভেতরে চাপ ছিল। আন্তর্জাতিক সমাজেও সংস্কারের কথা বলে বেশিদিন সমর্থন পাওয়া সম্ভব হবে না এই সরকারের জন্য। বিএনপিসহ একাধিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি করছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সেনাপ্রধানও একাধিকবার ডিসেম্বর বা ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন।
এই মুহূর্তে দেশের প্রধান দল বিএনপি ও সেনাবাহিনী উভয়েই ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য একমত হয়েছে। সঙ্গে অন্যান্য দলও আছে। এ অবস্থায় সরকার শিগগিরই নির্বাচন না দিলে ক্ষমতালোভী বলে বিবেচিত হবে, যা সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে না। ফলে নির্বাচনের একটি সময় ঘোষণা করা ছাড়া সরকারের আর কোনো পথ ছিল না।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকার এপ্রিলে কি আদৌ নির্বাচন করতে চাইছে? ওই সময়ে পরিবেশ ও আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি কি নির্বাচনের জন্য একদমই উপযোগী নয়? এমন নয় যে জরুরি ভিত্তিতে এপ্রিলে নির্বাচন করতে হচ্ছে বা এপ্রিল ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। ডিসেম্বরের সুবিধাজনক সময় বাদ দিয়ে এপ্রিলের বৈরী আবহাওয়ায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।