বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে বিশেষ হয়ে ওঠে

www.ajkerpatrika.com ড. মোর্ত্তুজা আহমেদ প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০৩

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। দাবিটি প্রথমে আবেগঘন মনে হতে পারে, কারণ দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে গভীরভাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, এই দাবির পেছনে বেশ কিছু সমস্যা ও প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। বিশেষ মর্যাদা কি সত্যিই প্রয়োজন? তা কি অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিচার নয়? আর বিশ্বের কোথাও কি সরকারের ‘বিশেষ মর্যাদা’ ঘোষণার মাধ্যমে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিই বিশেষ হয়ে উঠতে পারে?


প্রথমেই দেখতে হবে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা আসলে কিসে নিহিত। বিশ্বের যেকোনো প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়—হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বা মেলবোর্ন—তাদের কোনো সরকারিভাবে দেওয়া ‘বিশেষ মর্যাদা’ নেই। তাদের মর্যাদা এসেছে গবেষণার মান, নতুন জ্ঞান সৃষ্টির সক্ষমতা, সমাজের প্রয়োজন মেটানোর যোগ্যতা, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের মাধ্যমে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রমাণ করেছে—মর্যাদা বাইরে থেকে পাওয়া কোনো প্রশংসাপত্র নয়, বরং ভেতর থেকে অর্জিত এক সোনার মুকুট।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই ‘বিশেষ মর্যাদা’ চেয়ে যে যুক্তি তুলেছেন, সেটি ঐতিহাসিক অবদান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা বলে। নিঃসন্দেহে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা গৌরবময়। কিন্তু শুধু অতীতের অবদানকে পুঁজি করে ‘বিশেষ মর্যাদা’র দাবি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ইতিহাসের সম্মান রক্ষার চেয়ে বড় কাজ হলো বর্তমান প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে গড়ে তোলা। অতীতের গৌরবের ওপর দাঁড়িয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থমকে যাবে, নতুন উচ্চতা অর্জন করবে না।



অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়া হলে তা শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য সৃষ্টি করে। একই দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা নিজেদের অবহেলিত বোধ করতে পারেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায্যতা রক্ষার নীতির বিরুদ্ধাচরণ হবে এটি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন—রাজশাহী, চট্টগ্রাম বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করে মর্যাদা দেওয়া মানে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন ও প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়া। শিক্ষার জগতে প্রতিযোগিতা প্রয়োজন, কিন্তু সেটা হবে গবেষণা ও জ্ঞানের মানের ভিত্তিতে, প্রশাসনিক স্বীকৃতি বা ‘বিশেষ’ তকমা দিয়ে নয়।


এ ছাড়া, ‘বিশেষ মর্যাদা’ সরকারের পক্ষ থেকে এলে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকবে—এমন নিশ্চয়তা নেই। এমনিতেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দিলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির কাছে ‘বিশেষ’ হয়ে উঠতে পারে, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষা কার্যক্রমে রাজনৈতিক প্রভাবকে আরও পাকাপোক্ত করার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ তৈরি হতে পারে।


আন্তর্জাতিক উদাহরণগুলোও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়—বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা সরকারি ঘোষণায় আসে না। যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মর্যাদা নির্ধারিত হয় গবেষণার উৎকর্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাবের ভিত্তিতে। হার্ভার্ডের ‘বিশেষ মর্যাদা’ সরকার দেয়নি, দিয়েছে তার গবেষণার মান আর সমাজে প্রভাব। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ’ হতে হলে তাকে নিজস্ব শক্তির মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও