আপনার এজেন্ডা আমি বাস্তবায়ন করব কেন

যুগান্তর জিয়া আহমদ প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৫, ১১:৫১

একটি রাজনৈতিক দল যখন আত্মপ্রকাশ করে কিংবা গঠন-পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যায়, তখন ওই রাজনৈতিক দলটি তার মতাদর্শ, কর্মপদ্ধতি এবং কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করে, যা দলটিকে অন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক দল থেকে আলাদাভাবে চেনার সুযোগ করে দেয়। এ বিষয়গুলো ওই রাজনৈতিক দলটির ‘ইউএসপি’ বা ‘ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন’ হিসাবে চিহ্নিত হয় এবং তা দলটির আদর্শ, গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি মেনিফেস্টোরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে, দেশের জনগণের সামনে উপস্থাপিত হয়। এবং এগুলোর ভিত্তিতেই দলটি নির্বাচনকালে দেশের জনগণের কাছে গৃহীত বা পরিত্যক্ত হয়। বস্তুত আদর্শ পরিস্থিতিতে একটি দলের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়াও নির্ধারিত হয় দলটির প্রকাশিত ও প্রচারিত এ ‘মেনিফেস্টোর’ ওপর ভিত্তি করেই। আর সে কারণেই সব রাজনৈতিক দলই তাদের নীতি-আদর্শ, কর্মপরিকল্পনার ক্ষেত্রে যে কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে এবং একান্ত বাধ্য না হলে কিংবা জনগণের আকাঙ্ক্ষার চাপ না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল সাধারণত এ বিষয়গুলো পরিবর্তন করে না।


গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ তথা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অপশাসনের ফলে দেশের সব কটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ সার্ভিস থেকে শুরু করে নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ সবকিছুকেই একজন মানুষের (?) আজ্ঞাবহ করে তোলা হয়। ফলে দেশের মানুষ গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগই পায়নি। প্রশাসন ও পুলিশকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কারণে দেশের মানুষ নাগরিক অধিকার তো বটেই, ন্যূনতম নিরাপত্তা থেকেও বঞ্চিত ছিল। তাছাড়া দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে ব্যক্তিগত (ও অনুগত লোকদের) কোষাগার হিসাবে ব্যবহার করার ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও নবীন উদ্যোক্তারা বছরের পর বছর সব ধরনের ঋণ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত থেকেছে। রাষ্ট্রবিরোধী নানা চুক্তির ফলে আদানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিগুণ দামে বিদ্যুৎ কেনা, মেয়াদ উত্তীর্ণ ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার নামে হাজার কোটি টাকা ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসাবে প্রদান করার মাধ্যমে স্বজন ও অলিগার্কদের অনৈতিক অর্থ প্রদান এবং তা পাচারের সুযোগ করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া অবাধে লুণ্ঠন ও বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে বিদেশি ঋণে বাস্তবায়িত দেশের বড় বড় প্রকল্পকে একেকটা শ্বেতহস্তীতে পরিণত করা হয়েছে। দেশের সাবেক স্বৈরাচারী সরকার প্রিন্ট মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করে রাখার কারণে দেশের মানুষ মুখ খুলতে পারেনি; তারপরও যারা মুখ খোলার চেষ্টা করেছে, তারা হয় গুমের শিকার হয়েছে নয়তো পুলিশি নির্যাতনে স্তব্ধ হতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৫ বছরের নিবর্তনমূলক শাসনে দেশের নাগরিকরা বস্তুত প্রজায় পরিণত হয়েছিলেন। এসব কারণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।



গত বছরের ৫ আগস্ট সফল গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জনমনে দেশের পরিবর্তনের বিষয়ে একটি আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে যেন এদেশে আর কখনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। সে কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সেক্টরের জন্য মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যা ওই নির্দিষ্ট সেক্টরের পুনর্গঠন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। গত জানুয়ারিতে প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশন তাদের রিপোর্ট দাখিল করে। পরে সরকারের তরফ থেকে দাখিল করা সংস্কার কমিশন রিপোর্টগুলোর সারসংক্ষেপ তৈরি করে মতামত ও মন্তব্যের জন্য দেশের সব প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। রাজনৈতিক দলগুলোও যথাসময়ে তাদের মতামত সরকারকে জানিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দলের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করে, যার কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে। এরপরই শুরু হয় সমস্যা। সংস্কার বিষয়ে গঠিত এ কমিশনগুলোর দায়িত্বে ছিলেন দেশের প্রথিতযশা নাগরিকরা, যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো তারা কেউই রাজনীতিবিদ নন। ফলে তাদের তৈরি রিপোর্টের কোনো কোনো অংশে মাঠের বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেনি। তাছাড়া একই সমস্যাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে। সে কারণে সংস্কারের মৌলিক ধারণার সঙ্গে একমত হলেও তার জন্য যে সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশন রিপোর্টে, তার সঙ্গে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের যে ভিন্নমত রয়েছে, তা খুবই স্বাভাবিক। এ ছাড়াও কমিশন সদস্যদের কেউ কেউ দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার কারণে ওইসব দেশের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রথায় তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, যা তাদের রিপোর্টের বাস্তবায়নের সুপারিশে প্রতিফলিত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এ দেশের জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো এদেশে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে। সে কারণে তাদের পক্ষে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন বাইরের মানুষের চাপিয়ে দেওয়া সুপারিশের সঙ্গে একমত হওয়া কঠিন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ কমিশনগুলোর ‘টার্মস অব রেফারেন্সে’ বিদ্যমান রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তার সম্ভাব্য সমাধানগুলো তুলে ধরা পর্যন্ত রাখাই যথেষ্ট ছিল। আর এর সমাধানের দায়িত্ব দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই ছেড়ে দেওয়া যৌক্তিক হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনোভাবেই এ বিষয়ক কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে শামিল হওয়া যৌক্তিক হয়নি। কিন্তু আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংস্কার কমিশনে’র চিহ্নিত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যা তাদের বিতর্কিত করে তুলছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও