টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের চাই প্লাস্টিকমুক্ত পরিবেশ

বণিক বার্তা ড. তোফাজ্জল ইসলাম প্রকাশিত: ০৫ জুন ২০২৫, ১০:১০

প্রতি বছরের মতো এবারো ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন হচ্ছে। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘‌প্লাস্টিক দূষণের অবসান’। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু প্রদেশে এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবস আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হবে। প্লাস্টিক দূষণ আজ বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে, যা আমাদের পানীয় জল, খাদ্যশৃঙ্খল এবং স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে এমন দেশে প্লাস্টিক দূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। বাংলাদেশ সরকার এবার পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কোনো বিকল্প উদ্ভাবন ও গবেষণা ব্যতিরেকে শুধু আইনি ঘোষণায় ক্ষতিকর কিন্তু বহুল ব্যবহৃত পলিথিনের ব্যবহার কতটা বন্ধ বা হ্রাস পেয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। গত অর্ধশতকে প্লাস্টিকের ব্যবহার এতটাই বেড়েছে যে বর্তমান সময়কে ‘প্লাস্টিকের যুগ’ বলা যায়। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা এবং আমার মতামত শেয়ার করাই এ প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য।


প্রথমেই জেনে নিই কেন দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের আয়োজক? গত ২৮ বছরে জল ও বায়ুর মান উন্নয়ন, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ও বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্য, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের জন্য এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আয়োজক। প্রস্তুতকারকদের দায়িত্ব সম্প্রসারণ করে দেশটি প্লাস্টিক দূষণ রোধে বিশ্বে অগ্রণী। তাদের ‘‌পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র প্লাস্টিক কৌশল’ উৎপাদন থেকে নিষ্পত্তি (disposal) পর্যন্ত প্রতিটি স্তর মোকাবেলা করে। উৎসে বর্জ্য কমানো, পুনর্ব্যবহার বাড়ানো ও বৃত্তাকার অর্থনীতির (Circular economy) দিকে যাত্রার মাধ্যমে তারা টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ছে।


প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ কোটি ১০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্যদিকে কৃষিপণ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিক কণাগুলো এবং প্লাস্টিক থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত যৌগ পয়োনিষ্কাশন এবং ল্যান্ডফিল থেকে মাটি ও পরিবেশে ক্রমাগত জমা হচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণ ত্রিবিধ সংকটের মারাত্মক প্রভাবকে আরো বৃদ্ধি করছে: ১. জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট, ২. প্রকৃতি, ভূমি এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির সংকট এবং ৩. দূষণ ও বর্জ্যের সংকট। প্লাস্টিক দূষণের বার্ষিক সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ ৩০০-৬০০ বিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিকের এত গভীর সংকট সত্ত্বেও সারা বিশ্বে এর অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তার কারণ কী? এর উত্তরের সন্ধানে প্লাস্টিকের আবিষ্কার ও বিবর্তনের ইতিহাস, এর বহুমুখী ব্যবহারের সুবিধা এবং পাশাপাশি মাইক্রো/ন্যানোপ্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক নিঃসরণের মতো মারাত্মক প্রভাবগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যাক।


প্লাস্টিক হলো একটি কৃত্রিমভাবে তৈরি দ্রব্যাদি যা প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানি অথবা প্রাকৃতিক জৈব যৌগ থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়। এটি প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং বায়োমাস থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। প্রথম আধুনিক প্লাস্টিক আবিষ্কৃত হয় ১৮৫৫ সালে, যখন আলেকজান্ডার পার্কেস ‘পার্কেসিন’ নামে একটি প্লাস্টিক তৈরি করেন। যদিও এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিল না, তবে এটি ছিল প্রাকৃতিক প্লাস্টিক উৎপাদনের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। পরে ১৯০৭ সালে লিও বেকেল্যান্ড প্রথম পূর্ণতর সিনথেটিক প্লাস্টিক ‘বেকেলাইট’ উদ্ভাবন করেন যা ছিল প্লাস্টিক শিল্পে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। বেকেলাইট ছিল প্রথম সম্পূর্ণ কৃত্রিম পলিমার, যা ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহারে আসে। এরপর থেকে নানা ধরনের প্লাস্টিক আবিষ্কৃত হতে থাকে। এর মধ্যে কিছু প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে তৈরি (বায়োপলিমার), যেমন সেলুলোজ এবং কিছু সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে তৈরি, যেমন পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) ও পলিইথিলিন (পিই)। প্লাস্টিকের বহুমুখী ব্যবহার এর কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সম্ভব হয়েছে, যেমন হালকা ওজন, স্থায়িত্ব, নমনীয়তা, রাসায়নিক প্রতিরোধক্ষমতা, কম বিষাক্ততা এবং উৎপাদন খরচ। প্লাস্টিক উদ্ভাবনের ফলে কাঠ ও আঁশের জন্য গাছ কাটার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।



প্লাস্টিকজাত দ্রব্য, এর টুকরো, কণা বা নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ যখন পরিবেশে (মাটি, পানি, বায়ু) ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তখন সেই অবস্থাকেই সাধারণভাবে প্লাস্টিক দূষণ বলা হয়। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে এক হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা মাইক্রো বা ন্যানোকণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে প্রতিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যে ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। এ বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে। প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের সব দেশে এবং সব পরিবেশে এমনকি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, গভীর সমুদ্রের তলদেশ এবং মেরু অঞ্চলেও বিস্তৃত।


পরিবেশে অপচনশীল নানা প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি এবং পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মিথস্ক্রিয়ার ফলে মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক কণা এবং নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যেমন বিসফেনল-এ, বিসফেনল-এস, থ্যালেটস ইত্যাদি পরিবেশে নির্গত হয়। এসব মাইক্রো ও ন্যানোকণা এবং নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ এবং অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেমকে নষ্ট করতে পারে। ফলে প্লাস্টিক দূষণ মানুষ ও অন্যান্য জীবের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে নানা দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়া এসব প্লাস্টিক ন্যানোকণা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের কোষাভ্যন্তরে অবস্থিত ডিএনএ এবং আরএনএ অণুর মধ্যে পরিবর্তন করে ক্যান্সার বা স্নায়ুতন্ত্র বিকল করতে পারে। তবে একক ব্যবহার পলিথিন ব্যাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এদের যত্রতত্র ব্যবহার এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার ফলে নিষ্কাশন নালা, খাল এবং নদীর প্রবাহ বিনষ্ট হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আক্রান্ত হচ্ছে জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদের শিকড়ের বিস্তার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও