You have reached your daily news limit

Please log in to continue


আদিজ্ঞান আর পাশ্চাত্য-বিজ্ঞানের সমন্বয় জরুরি

আদি মানবগোষ্ঠী যাপিত জীবন থেকে, পৃথিবী আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে। তাদের জ্ঞান আহরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণের পন্থা হয়তো তথাকথিত আধুনিক মানুষের চেয়ে ভিন্নতর ছিল। তবে মানুষ হিসাবে নিজেদের অস্তিত্ব অটুট রাখার জন্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও বৃহত্তর প্রাণিজগতে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে জ্ঞানচর্চা ছাড়া তাদের কোনো গত্যন্তর ছিল বলে মনে হয় না। অন্যদিকে আধুনিক সমাজের মানুষ, নতুন সহস্রাব্দের বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় স্নাত মানুষ, জ্ঞান লাভ করে খানিকটা অন্যভাবে। একটি পর্যবেক্ষণকে উপাত্তে রূপান্তরিত করে সেই উপাত্তের আলোকে জ্ঞানকে ধারণ করা বিজ্ঞানের অনড় লক্ষ্য। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে আপত্তি ওঠে তখনই, যখন অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষণের এ দোলাচলে আধুনিক মানুষ বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞানকে অটুট ধরে নিয়ে আদিজ্ঞানকে অস্বীকৃতি জানায় কিংবা উপেক্ষা করে। লাখ লাখ বছর ধরে সঞ্চিত জ্ঞানকে পাঁচশ বছরের উপাত্তনির্ভর বিজ্ঞান ছুড়ে ফেলে দেবে, এ প্রস্তাব উপস্থাপন অবান্তর হওয়াই বাঞ্ছনীয়! আদিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের সংশ্লেষ থেকে তাই উঠে আসতে পারে কালোত্তীর্ণ জ্ঞান, যা আজকের পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের জটিল অবস্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই আদিজ্ঞান আর পশ্চিমা-বিজ্ঞানের মিথস্ক্রিয়া যে অবশ্য কাম্য, জাতিসংঘের পরিবেশ দিবসে সেই প্রস্তাব তুলে ধরছি।

মানবসভ্যতার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীনতম মানব দেহাবশেষের সন্ধান মিলেছে পূর্ব আফ্রিকার গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি অঞ্চলে, যারা বসবাস করত আজ থেকে দুই লাখ বছরেরও আগে। তবে যাযাবর মানব প্রথম ঘরবৈঠা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১২,০০০ সহস্রাব্দে, কৃষিকাজের মধ্য দিয়ে। সেই থেকে শুরু। পূর্ব আফ্রিকা থেকে মানুষ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র। গড়ে তোলে সাম্রাজ্য, রাষ্ট্র, নগর। আর এ দীর্ঘ যাত্রাপথে আদিমানবের জ্ঞান সঞ্চিত হতে থাকে। এ জ্ঞান মূলত অভিজ্ঞতাপ্রসূত, পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে অর্জিত। তাদের এ পর্যবেক্ষণ ইন্দ্রিয়-অনুভূত, উপাত্তনির্ভর নয়। আর এমন পর্যবেক্ষণ মানুষকে ইনডাক্টিভ রিজনিংয়ের ক্ষমতা এনে দেয়-অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে সংঘটিত যে কোনো ঘটনার ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি ঘটবে এ অনুমানে সমর্থ করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, আগুনের দহন ক্ষমতার পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার যে মানব আগুন স্পর্শ করেছে, সে জেনে গেছে যে, আগুন প্রথমবার যেমন পুড়িয়েছে, তেমনই আগামী দিনেও দগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। অ্যারিস্টটলীয় আমল থেকেই পর্যবেক্ষণ আর অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এমন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রহ-নক্ষত্রকে নির্দিষ্ট করা আর গ্রহ-ব্যবস্থায় সূর্য আর পৃথিবীর আপেক্ষিক ভূমিকা নিয়ে তর্ক জুড়ে দেওয়াতেই নিবিষ্ট ছিল ইনডাক্টিভ রিজনিংনির্ভর মানবজ্ঞান, যার প্রভাব লক্ষ করা যায় ১৬০০ শতকে ফ্রান্সিস বেকন পর্যন্ত। এ জ্ঞানযন্ত্রের দুর্বলতা নিয়েও তর্ক উঠেছে। স্কটিশ এনলাইটেনমেন্টের পুরোধা, দার্শনিক ডেভিড হিউম দেখিয়েছেন, ইন্ডাক্টিভ রিজনিং অনুমাননির্ভর, প্রমাণের অপেক্ষা সে করে না। তাই এহেন যুক্তিভিত্তিক পন্থা অবলম্বনে ভুল থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবুও ইন্ডাক্টিভ রিজনিং যে আদিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে, একথা মানতেই হবে।

অন্যদিকে উপাত্তনির্ভর আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছে স্যার আইজ্যাক নিউটনের আবির্ভাবের মধ্যে দিয়ে। নিখুঁত, সুচারু পরীক্ষানির্ভর উপাত্তই হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুসন্ধানের প্রাণবায়ু। জন্ম হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের; এক নিখুঁত জ্ঞানযন্ত্রের। মাইকেল স্ট্রিভেন্স তার ‘নলেজ মেশিন’ গ্রন্থে স্পষ্ট দেখিয়েছেন বিজ্ঞানের উপাত্ত নির্ভরতার শক্তি। তিনি বলছেন, বিজ্ঞান এমন অনুসন্ধানে নিয়োজিত, যা সব ধরনের বাহ্যিক প্রভাবকে (যেমন ধর্মবিশ্বাস, অনুমান, সংস্কার ইত্যাদি) ছাপিয়ে নিষ্কলঙ্ক উপাত্ত সংগ্রহ করে। আর তাতে যে সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যাবে, সেটিকেই সত্য বলে ধরে নিতে হবে। এটিই বিজ্ঞানের অনমনীয় ‘আয়রন রুল’। বিজ্ঞানের এ অকাট্য নিয়ম জারির ক্ষমতাই আজকের দ্রুত যন্ত্রায়নের মূল চালিকাশক্তি।

বিজ্ঞানের অনুসন্ধান পদ্ধতির এ শক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন। আর এ কারণেই বিজ্ঞানচর্চায় নিয়োজিতরা ‘গড কমপ্লেক্স’ নামক এক ধরনের উন্নাসিকতায় ভোগেন। তাদের অনেকের মতে, বিজ্ঞান সব প্রশ্নের উত্তর জানে। তাই যদি হবে, তবে পৃথিবীর ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ আজও সুপেয় জলের অভাবে রয়েছে কেন? কেন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দুর্ভাবনায় অনিদ্রায় ভোগেন বিশ্বনেতারা? কেন কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রাণহানি ঘটবে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষের? কেন ২১০০ সাল নাগাদ হিমালয়ের প্রায় ১৬০০০ হিমবাহ হারিয়ে যাবে, শুকিয়ে যাবে সিন্ধু অববাহিকা? বিজ্ঞান ক্ষমতাশীল বটে, তবে অপরাজেয় নয়। আর তাই লাখ লাখ বছর ধরে সঞ্চিত জ্ঞানের আধার আদিবাসীদের জ্ঞানকে বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্মিলনেই মানবমুক্তি সম্ভব।

শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার মন্ত্রণা সম্পর্কে জানলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ত্বরান্বিতই হবে। তাই সময় এসেছে আদিজ্ঞানকে আত্তীকরণের। প্রয়োজন এসেছে সহস্রাব্দের চর্চিত সংস্কার আর অর্জিত অভিজ্ঞতাকে বিজ্ঞানের সঙ্গে সমন্বয়ের। ইতোমধ্যে এমন সম্মিলনের নজির পাওয়া গেছে। নাভাহো গোত্রের একটি উদাহরণ টানছি। এ গোত্রভুক্ত ৫০ জন বর্ষীয়ানের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে ঝড়ের পূর্বাভাস আর সুপেয় জলের সহজলভ্যতার সম্পূরক উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনই আরেকটি উদাহরণ রয়েছে মাইক্রোনেশিয়ার মাকিন দ্বীপের কিরিবাতি আদিবাসীদের। আদিগল্পকে ব্যবহার করে আর দ্বীপটির চরে খুঁজে পাওয়া বোল্ডারের ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের সমন্বয়ে বিজ্ঞানীরা এ দ্বীপে ঘটে যাওয়া সুনামির ইতিহাস খুঁজে পেয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বীপবাসীদের জ্ঞানের শক্তিরও এমন নজির পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীর ছেঁড়াদ্বীপ চর কাশেম ও বরগুনার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের অধিবাসীরা পশুপাখির আচরণ, জোয়ার-ভাটা চক্রের পর্যালোচনা আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সমন্বয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। লেখকের নিজস্ব গবেষণায় দক্ষিণ মেক্সিকোর জাপোটেক আদিবাসীদের জল ব্যবস্থাপনার আদিজ্ঞান ও এর ক্ষমতার বৈজ্ঞানিক নিদর্শন উঠে এসেছে। এ উদাহরণগুলো এটিই প্রমাণ করে যে, আদিজ্ঞানের ভান্ডারকে আমরা যথার্থভাবে কাজে লাগাচ্ছি না। উষ্ণায়নের আজকের চরমাবস্থায় বাংলাদেশের দ্বীপবাসীর শতাব্দী-ঋদ্ধ জ্ঞান উপেক্ষার অবসান হোক।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন